পুকুর কিভাবে খনন করতে হয় তা শিখতে বিদেশে যাচ্ছেন ১৬ জন সরকারি কর্মকর্তা। বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুরগুলোর পানি সেচের কাজে লাগানোর জন্য পুনঃখনন করা হবে। তা শিখতে বিদেশে যাচ্ছেন ওই কর্মকর্তারা। যদিও এসব পুকুর কৃষকরা এখন ব্যবহার করছেন।
এ জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন তারা এই প্রকল্পেরই কর্মকর্তা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
পুকুর খনন ও ক্ষুদ্র সেচের দক্ষতা লাভের জন্য বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প হলেই তার সঙ্গে বিদেশ সফর রাখার একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্পের জন্য দেশীয় জ্ঞান কাজে না লাগিয়ে প্রথমে বিদেশে যাওয়াটা তারা সমর্থন করছেন না।
২৭ আগস্ট একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের ১৬ কর্মকর্তা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস—যেকোনো একটি দেশ সফর করবেন। প্রথম পর্যায়ে আটজন ও পরবর্তী পর্যায়ে আট কর্মকর্তা এই সফরে যাবেন। আটজনের মধ্যে চারজন করে বিএমডিএর প্রকৌশলী আর বাকি চারজন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থাকবেন।
প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছেন বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন। বিদেশ সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওই সব দেশ দক্ষতার সঙ্গে কীভাবে এবং কী প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূ-উপরিস্থ বৃষ্টির পানি ব্যবহার করছে, সে বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য এই সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। শুধু পুকুর খননের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। পুকুরের ধারে গাছ লাগানোর জন্য রাখা হয়েছে ২ কোটি টাকা। ‘লো লিফট পাম্প’–এর জন্য ১৫ কোটি ৩০ লাখ ও সফরের জন্য রাখা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকালে ১০ জন কর্মকর্তা ও আটজন কর্মচারী কাজ করবেন। তাদের বাড়িভাড়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান দেশের ভূগর্ভস্থ জলাধার ব্যবস্থাপনা জাতীয় কৌশল নির্ধারণী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো প্রকল্প হলেই তার সঙ্গে বিদেশ সফর রাখার মানেই হচ্ছে জনগণের ওপর করের চাপ বাড়ানো।’
তিনি মনে করেন, আগে দেশীয় জ্ঞান ও বিবেচনা কাজে লাগিয়ে দেখতে হবে। তাতে একান্তই সম্ভব না হলে একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা যেতে পারে। সুত্র: প্রথম আলো।