অবিনাশী বোধসত্ত্বার এক কবি রফিক আজাদ। ‘ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র ছিড়ে খাবো’-এর মতো অসংখ্য অবিনাশী কবিতার স্রষ্টা এই কবির ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ, ১২ মার্চ।
বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা এই কবির জন্ম ১৯৪১ এর ১৪ ফেব্রুয়ারী। টাংগাইলে ঘাটাইল উপজেলার জাহিদগঞ্জের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। অংশ নিয়েছিলেন ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যদ্ধে। জীবন জুড়েই বিভিন্ন সাহিত্যপত্র সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান এই কবি।
রফিক আজাদের বাবা সলিম উদ্দিন খান ও মা রাবেয়া খান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
১৯৫৬ সালে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র্রাবস্থায় বাবার হাতে মার খেয়ে পালিয়েছিলেন বাড়ী থেকে। উদ্দেশ্য ছিল, পি সি সরকারের কাছে ম্যাজিক শিখবেন। তরব শেষপর্যন্ত তা হয়নি। ময়মনসিংহের ঈম্বরগঞ্জ স্কুলের হেডমাস্টার তাকে বুঝিয়ে বাড়ীতে ফেরৎ পাঠান।
১৯৭১ সালে কাদের সিদ্দীকির নেতৃত্বাধীন কাদেরীয়া বাহিনীর হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তিনি।
স্কুলজীবনের প্রিয় বন্ধু মাঈন একদিন রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি পুরো আবৃত্তি করে শুনিয়েছিল তাকে। সন্ধ্যাবেলা ফটিকজানি নদীর তীর ঘেঁষা ডাকবাংলোর বারান্দায় বসে সেই কবিতা শুনে স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন কিশোর রফিক আজাদ। কবিতার প্রতি প্রবল প্রেমের শুরুও সেখান থেকেই।
তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগলোর অন্যতম গুলো: (১) অসম্ভবের পায়ে (২) সীমাবদ্ধ জলে` সীমিত সবুজে (৩) চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া (৪) বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে (৫) কোন খেদ নেই (৬) হৃদয়ের কী বা দোষ।
জীবদ্দশায় অনেক পুরষ্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। একুশে পদক পেয়েছেন ২০১৩ সালে। ১৯৮১ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার।
এছাড়াও হুমায়ুন কবির স্মৃতি (লেখক শিবির) পুরস্কার (১৯৭৭), আলাওল পুরস্কার (১৯৮১), কবিতালাপ পুরস্কার (১৯৭৯), ব্যাংক পুরস্কার (১৯৮২), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), কবি আহসান হাবীব পুরস্কার (১৯৯১), কবি হাসান হাফিজুর রহমান পুরস্কার (১৯৯৬) পুরষ্কার লাভ করেন সাহসী উচ্চারণে সুদক্ষ এই কবি।
২০১৬ সালের ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বাংলা সাহিত্যকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান রফিক আজাদ।