মাদক সেবনে নিষেধ করায় দফায় দফায় হামলা, আতংকগ্রস্থ এলাকাবাসী

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাড়ির পাশে বখাটেপনা ও মাদক সেবন করতে নিষেধ করায় চার মাদকসেবীর নেতৃত্বে এলাকার দুই বাড়িতে কয়েক দফা হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় মাদকসেবী বখাটের দল ওই দুই বাড়ির গ্রীলের দরজা, জানাজা ও ঘরের টিনের বেড়াসহ জিনিসপত্র ভাংচুর ও এবং লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ সময় হামলাকারীদের ধাঁরালো ছুরিকাঘাতে গৃহকর্তা ফকিরা দাসসহ তাঁর তিন ছেলে মাথায় মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তারা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সৈয়দপুর পৌরসভার হাতিখানা মাছুয়াপাড়ায় গত সোমবার, ৩০ মার্চ দুুুপুরে এবং আগের দিন রবিবার রাতের এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানা একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

তবে এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেননি পুলিশ। উপরন্ত পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় মাদকসেবীরাও ই দুই পরিবারের সদস্যদের বার বার জীবননাশসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করছে। এ ঘটনায় এলাকায় ৩০/৪০টি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। বখাটেদের হামলার ভয়ে তারা দিনের বেলায়ও তাদের বাড়ি-ঘরের দরজা-জানাজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, গত রবিবার সন্ধ্যায় আনুমানিক সাড়ে ৭ টার দিকে চার চিহিৃত বখাটে ও মাদকসেবী গৌতম (২২), রানা (২৪) সবুজ (২৩) ও রনি (২০) ওই এলাকা এসে গুরুচরণ দাসের বাড়ির সংলগ্ন একটি বন্ধ থাকা দোকানে সামনে এসে প্রকাশ্যে মাদকসেবন করে উচ্ছৃংখল আচরণ ও অশ্লীল কথাবার্তা বলছিল। আর এ সময় পাশের গুরুচরণ দাসের বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী শ্রী গোলাপ দাস (২৯) বাড়ির থেকে বের হয়ে মাদকসেবীদের উচ্ছৃংখল আচরণ করতে নিষেধ করেন। আর এতে তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিন্ডার শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে চার মাদকসেবী নানা রকম হুমকি-ধমকি দিয়ে সেখানে থেকে চলে যায়।

পরে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে ওই চার মাদকসেবী নেতৃত্বে ১০/১৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় বিভিন্ন ধাঁরালো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গুরুচরণ দাস ও ফকিরা দাসের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরাওই দুইটি বাড়ির গ্রীলের দরজা-জালানা ও টিনের বেড়া এবং ঘরে থাকা আসবাবপত্র, টিভিসহ অন্যান্য মালামাল ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা বাড়ির সদস্যদের ওপর ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

আশপাশের লোকজন তাদের দ্রুত উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হওয়া তাদের রংপুর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। বর্তমানে তারা তিনজনেই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।

এ ঘটনার গত রবিবার রাতে সৈয়দপুর থানায় মৌখিক ও সোমবার সকালে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদকসেবীরা সোমবার দুপুরে আবারও গুরুচরণ দাস ও ফকিরা দাসের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা করে পরিবারের সদস্যরদের বেদম মারপিট করে। এ সময় বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণতি ভালো খারাপ হবে না বলে শাসায় সন্ত্রাসীরা।

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে সৈয়দপুর পৌরসভা ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আল-মামুন সরকার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সলর মো. আজগার আলী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর কণিকা রানী সরকার ঘটনাস্থল গিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও দুই পরিবারের ওপর মাদকসেবীদের হামলার বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ দুপুরে এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গোটা এলাকায় সুনশান নীরবতা। বাড়ি বাইরে কোন লোকজন নেই। এলাকার সকল বাড়িঘরের দরজা জানাজা বন্ধ। গোটা এলাকার থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। পরে এলাকায় সাংবাদিক এসেছে জেনে দুই একজন করে বাড়ির বাইরে এসে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে অনেকেই মাদকসেবীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি।

হামলার শিকার গুরুচরণ দাস অভিযোগ করেন, গতকাল সোমবার সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে তাদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করা হয়। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশ পদক্ষেপ নিলে তারা আর দ্বিতীয় দফা হামলার সাহস দেখাতো না। পুলিশের তৎপতরা না থাকায় তারা দফায় দফায় হামলা চালায়। এছাড়াও তারা আমাদের নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি গুরুতসহকারে দেখা হচ্ছে। এলাকায় একজন পুলিশ অফিসারকে সার্বক্ষণিক অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।