রংপুরে চামড়ার সরবরাহ কম, দাম নিয়ে একে অপরকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা

রংপুরে কোরবানির পশুর চামড়ার সরবরাহ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। বিগত এক দশকের মধ্যে সরচেয়ে কম চামড়া আড়তে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

তারা দাবী করছেন, আমদানি কম হওয়ায় বেশি দামে চামড়া কিনছেন তারা। অবশ্য চামড়া বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।

সোমবার, ১২ আগস্ট বিকালে রংপুর মহানগরীর চামড়াপট্টি হাজীপাড়া এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার চামড়ার সরবরাহ খুবই কম। যেখানে সন্ধ্যা হলে একেক জন ব্যবসায়ীর আড়তে এক হাজারের ঊর্ধ্বে চামড়া কেনা হয়, এবার তার অর্ধেকও হয়নি। তবে ট্যানারি মালিকদের চাহিদা ও পূর্বের পাওনা টাকা ফেরত পাবার আশায় বেশি দামে চামড়া কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে লোকসানের আশঙ্কাও রয়েছে ব্যবসায়ীদের মনে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনছেন দাবি করলেও বিক্রেতারা বলছেন উল্টো কথা। তারা বলছেন, কেনা দামের অর্ধেকও মিলছে না বাজারে। সামান্য লাভের আশায় এবার চামড়া কিনে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা।

চামড়াপট্টি আশরাফিয়া মসজিদের বিপরীতে চামড়ার আড়তে কথা হয় মৌসুমি ব্যবসায়ী নুর হোসেনের সাথে। তিনি জানান, নগরীর হাজিরহাট এলাকা থেকে ২১টি গরুর চামড়া ২৭ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন তিনি। বাজারে বিক্রি করতে এসে অর্ধেক দামও পাচ্ছেন না। একেকটি চামড়া গড়ে যেখানে এক হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন, বাজারে বেচতে গিয়ে তার মূল্য ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

অর্ধেক দামও পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

আব্দুল মতিন নামে আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত বছর লোকসান হয়েছিল। তারপরও এবার চামড়া কিনেছি। কিন্তু এখন আমি ধ্বংস হয়ে যাব। সুদের উপর নেয়া ঋণের টাকায় চামড়া কিনে আমি শেষ। খড়িদ্দাররা যে দাম দিচ্ছেন, এতে তওবা করে এই ব্যবসা ছাড়তে হবে।

মতিনের মতো রংপুরের অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী এবার চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এর জন্য তারা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের নির্ধারণ করা মূল্য এবং স্থানীয় আড়তদারদের সিন্ডিকেটকে দুষছেন।

মেসার্স মাহবুব ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী চামড়া ব্যবসায়ী মাহবুবার রহমান বলেন, ঈদে সিন্ডিকেট তৈরি করছেন ট্যানারি মালিকরা। তাদের নির্ধারণ করা মূল্যে চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এখন লোকসানের ঝুঁকি নিয়েই বেশি দামে চামড়া কিনতে হচ্ছে। প্রতিবছর যেখানে শুধু চামড়াপট্টিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার চামড়ার আমদানি হয়, এবার চার ভাগের এক ভাগও আমদানি নেই।

প্রসংগত, এ বছর সরকার ও ট্যানারি মালিকরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। গত বছর এ দাম ছিল ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০-৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা। অপরদিকে এবার প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গতবছর ছিল ২০-২২ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩-১৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ১৫-১৭ টাকা।

জেএম/রাতদিন