রংপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন জেলা পরিষদের সদস্যরা। বর্তমানে ওই পরিষদে আছেন ১৯ সদস্য। তাদের মধ্যে ১৪ জন সদস্য বুধবার, ২৬ জুন জেলা পরিষদের হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন মিয়া।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, জেলা পরিষদের নির্বাচনের আড়াই বছর হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। চেয়ারম্যান পরিষদকে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তিনি নির্বাচিত সদস্যদের সাথে আলোচনা না করে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রংপুরের ৮ উপজেলায় শতাধিক জীবিত গাছকে মরা দেখিয়ে একক সিদ্ধান্তে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ওরিয়েন্টাল সিনেমা হলের জমি নিয়ে জনৈক মোস্তাফিজার রহমানের সাথে জেলা পরিষদের হাইকোর্টে মামলা চলছে। বেশ কয়েক কোটি টাকা মুল্যের সেই সম্পত্তির মামলা অবৈধ লেনদনের পর চেয়ারম্যান আর পরিচালনা করতে চাচ্ছেন না। ফলে এ সম্পদ হাতছাড়া হবার উপক্রম হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্যরা অভিযোগ করেন, গত আড়াই বছরে চেয়ারম্যান পরিষদের রাজস্ব আয়-ব্যায়ের হিসাব জানতে চাইলে দেননি। বরং ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ২০১৭-১৮ বছরের শতকরা ৪০ ভাগ কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। ওই বছরের বিশেষ বরাদ্দের চার কোটি টাকা ব্যয়ের জন্য কোনো কাজের দরপত্র আহবান না করে ব্যাংকে ফেলে রেখে এর লাভ্যাংশ গ্রহণ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের আরো নানা অভিযোগ আনা হয়েছে রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমের বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদের সদস্যরা তাঁর দুর্নীতির তদন্তসহ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ফিরোজ হোসেন মিয়া, মোহসীনা বেগম, শাহ রফিকুল ইসলাম, রফিকুর রহমান, সেলিনা খাতুন, পারভীন আকতার ও রিয়াজুল রনি প্রমুখ।
যা বললেন অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম :
বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগের বিষয়ে রাতদিননিউজের সাথে কথা হয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমের সাথে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি। উল্টো তিনি সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জেলা পরিষদের সদস্যদের অন্যায় আবদার রক্ষা না করায় তারা আমাকে হেয় করার অপচেষ্টা করছে।’
গাছ বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বদরগঞ্জের রাস্তার গাছ অন্যায়ভাবে বেশ কয়েকজন সদস্য বিক্রি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করলে ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে রেজুলেশন করা হয়েছে।’
বার্ষিক উন্নয় কর্মসূচির চার কোটি টাকা ব্যাংকে রেখে সুদ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে ছাফিয়া খানম বলেন, ‘এ তহবিলের টাকা কিস্তিতে আসে ফলে সেভাবেই খরচ করা হয়। সুতরাং ব্যাংকে রাখার প্রশ্নই ওঠে না।’
এনএইচ/ রাতদিন