নরসিংদীর কাউরিয়া পাড়ার নতুন লঞ্চঘাটের শৌচাগারে নিজের দুই মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বাবা শফিকুল ইসলাম।
শনিবার ২৫ মে, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ।
গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে লঞ্চঘাটের শৌচাগারের ভেতর থেকে নুসরাত জাহান তাইন (১০) ও তানিশা তাইয়েবা (৪) নামের দুই বোনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নুসরাত ও তানিশা মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নের পূর্ব চালাকচর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
প্রেস ব্রিফিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, লাশ দুটি উদ্ধারের পর শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলে এসে নিহতদের নিজের সন্তান বলে দাবি করেন শফিকুল ইসলাম। হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল ইসলাম একে একে দুই মেয়েকে শ্বাস রোধ করে হত্যার বর্ণনা দেন। তবে তিনি নিজের কথায় স্থির থাকতে পারছিলেন না সে। শফিকুল ইসলামের কথাবার্তায় নানা রকম অসংগতি পাওয়া গেছে।
তিনি একই কথা একেক সময় একেকভাবে বলছেন। একবার বলছেন, দারিদ্র্য, মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিতে না পারা, আবদার অনুযায়ী মেয়েদের নতুন জামা দিতে না পারার মতো বিভিন্ন ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। আরেকবার বলছেন, লঞ্চঘাটে আসার পর মেয়েরা লিচু খেতে চেয়েছিল, কিন্তু তাঁর কাছে টাকাপয়সা না থাকায় অস্থির হয়ে পড়েন তিনি। পরে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বড় মেয়েকে বাইরে বসিয়ে রেখে লঞ্চঘাটের শৌচাগারে ছোট মেয়েকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। পরে বড় মেয়েকে একই কায়দায় হত্যা করে ফেলে রেখে চলে যান। আবার কিছুক্ষণ পরেই বলছেন, আমি তো এসবের কিছুই জানি না।
নিহত দুই শিশুর পরিবারের লোকজন বলছেন, শুক্রবার বড় মেয়েকে চর্মরোগের ডাক্তার দেখাতে ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মনোহরদী থেকে শিবপুরে আসেন শফিকুল ইসলাম। কাঙ্ক্ষিত ডাক্তারকে না পেয়ে বড় মেয়ের লঞ্চঘাট দেখার আবদার রাখতে নরসিংদী শহরের কাউরিয়া পাড়ায় আসেন তিনি। সেখানেই দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন শফিকুল, এমন খবর পান তাঁরা।
শফিকুল ইসলামের পরিবারের লোকজনের ভাষ্য, প্রায় ১৪ বছর আগে প্রথম বিয়ে করেন শফিকুল। বিয়ের পর তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হলে পরিবারের লোকজন তাঁর চিকিৎসা করান। চিকিৎসা শেষে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করানো হয় তাঁকে। এরপর থেকে তিনি মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করে আসছিলেন। তবে মাঝেমধ্যেই মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো আচরণ করতেন তিনি। কিছুক্ষণ পরই আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যেত। শফিকুল ইসলাম থার্মেক্স গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এর আগে তিনি শহরের লঞ্চঘাটসংলগ্ন আলীজান জুট মিলে কাজ করতেন।
নিহত দুই শিশুর মা ও শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আফিয়া বেগম বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে শিবপুরে যাওয়ার পর আমি ওদের বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি তখন আমাকে বলেন, ডাক্তারকে পাইনি। এখন মেয়েরা লঞ্চঘাট দেখতে চাচ্ছে। একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ওদের। পরে সবাই মিলে লঞ্চঘাট দেখতে যায়। দুই মেয়েকে তাদের বাবা খুবই আদর করতেন। কিন্তু কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল আমরা বুঝতেই পারছি না।’ মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে হঠাৎ হঠাৎ ভারসাম্যহীন হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন ধরে তাঁর এই সমস্যাটা ছিল না।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় সবকিছু দেখে প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, মেয়েদের বাবাই অভাবের তাড়নায় তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন। তা ছাড়া অন্য কোনো বিষয় এতে আছে কি না, আমরা তদন্ত করে দেখছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এইচএম/ রাতদিন