ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৮তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া বিন হক শুভ। রাজধানীর ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয় ২৪ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিক্ষোভ, মানববন্ধন। শুভকে নিয়ে লন্ডন থেকে রাতদিননিউজের মতামত বিভাগের জন্য লিখেছেন আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা:
শৈশব, কৈশোর, বেড়ে ওঠা লালমনিরহাটের প্রাণের কালীগঞ্জে। স্কুলজীবনেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শুরু রাজনীতি। কালীগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়ার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নির্বাচিত হই। সেসময় কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হক স্যারের সাথে আলাদা রকমের সখ্যতা তৈরী হয়। পরে সেটা পারিবারিক সম্পর্কে রূপ নেয়।
এখন লন্ডনে থাকি। সুদূর প্রবাস থেকে বিষন্ন মন নিয়ে লিখছি। আমি বিষাদগ্রস্থ, বিধ্বস্ত। আমার প্রিয় ‘হক’ স্যারের রেখে যাওয়া সন্তান জাকারিয়া বিন হক শুভর জন্য।
জীবিকার তাগিদে পারি দেয়া সুদূর প্রবাসে। ছেড়ে আসতে হয় আত্মীয়-স্বজন আর প্রিয় মানুষগুলোকে। দূরে থেকে কতটাই বা খোঁজ খবর নেয়া সম্ভব?
প্রায় আড়াই দশক আগে দেশ ছেড়ে আসার আগের দিন, স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাই তাঁর বাড়িতে। স্যার শুভকে কোলে নিয়ে আমাকে বিদায় জানান। তখন ওর বয়স দেড় বা দুই বছর।
সেটাই ছিল শুভর সাথে আমার প্রথম এবং শেষ দেখা । পরে জানতে পারি, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি যেন একটা বিষযয়ে পড়ছে। আর বছর খানেক আগে জানতে পারলাম আমার প্রিয় আব্দুল হক স্যার মারা গেছেন। খবরটা শুনেই মনটা ভরাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
আর এক বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটা জানতে পেরে আমি হতবাক, নির্বাক। চোখের সামনে ভেসে উঠে একপলক দেখা শুভ’র সেই মুখখানি।
মনের কষ্টগুলো লিখে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। দূর থেকে আল্লাহর কাছে শুভর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
সেই সাথে প্রতিবাদ ও সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। আর এলাকাবাসী, শুভর বন্ধু, স্বজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি
আপনারা ন্যায় বিচারের জন্য আওয়াজ তুলুন।
আমরা যদি শুভ ‘হত্যার’ সঠিক বিচার করতে পারি তাহলে কিছুটা হলেও মনকে সান্তনা দিতে পারবো। স্যারের প্রতি আমাদের ভালোবাসার ঋণ কিছুটা হলেও কমবে।
আমাদের ক্ষমা করবেন স্যার, আমরা আপনার শুভকে বাঁচাতে পারিনি। ওপারে ভালো থাকবেন স্যার, তুমিও ভালো থেকো শুভ। তোমার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ি তাদের বিচার হবেই হবে ।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা, লন্ডন প্রবাসী। গৌরব ৭১ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি।