রংপুর নগরীর বুক চিরে প্রবাহিত দখল আর দূষণের শিকার ঐতিহ্যবাহী শ্যামা সুন্দরী খালটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১২৯ বছরের ঐতিহ্যের বাহক শ্যামা সুন্দরীর উৎস মুখ রংপুর সেনানিবাসের ঘাঘট নদ থেকে মাহিগঞ্জ পাটবাড়ি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার খালের দুই পাশের ১৭০ জন অবৈধ দখলদারকে মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আগামী মার্চ মাস থেকে খালটির সংস্কার কাজ শুরু করার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে, দখলদারদের বিরুদ্ধে রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে তাদের দখল করা জায়গা খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর খালটি সংস্কারের ব্যয় ভার ধরা হয়েছে একশ কোটি টাকা।
এর আগে, ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ১২ কিলোমিটার শ্যামা সুন্দরী খাল সংস্কার, খালের ওপর সেতু নির্মাণ ও খননের জন্য তৎকালীন রংপুর পৌরসভা ২৫ কোটি টাকার দরপত্র আহŸান করে। ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের কাজ ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। ওই সময়ে খালের কিছু অংশের দুই পাশে বোল্ডার বসানো, খালের দুই পাশে ফুটপাথ নির্মাণ এবং খাল খনন ছাড়াই তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়।
সেসময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে কাজ সম্পূর্ণ না করেই বিল তোলার অভিযোগ ওে তৎকালীন সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে।
খালটি সংস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান জানান, রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন, রংপুর জেলা প্রশাসন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় নগরীর শোভা বর্ধনের জন্য ১৬ কিলোমিটার খালের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত সার্ভে কাজ শেষে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে আমরা ১৭০ জন খাল দখলকারীকে চিহ্নিত করেছি। রংপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের চলতি মাসের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সরিয়ে না নিলে ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, শ্যামা সুন্দরী খাল পুনঃখননের কাজ দুই ভাবে করা হবে। প্রথমত খাল খনন ও প্রটেকটিভ ওয়াল নির্মাণের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। আর খালের দুই ধারে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখলে এর ব্যয় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর জন্য আমরা যৌথ কমিটিকে পরামর্শক নিয়োগের কথা বলেছি। রংপুর নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খোকসা ঘাঘটের ডান তীর থেকে পাঁচটি বহুতল ভবন উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া ২০ কোটি মূল্যের প্রায় দেড় একর সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বাম তীরের পাঁচ মিটার সার্ভে কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১৩টি অবৈধ স্থাপনা পাওয়া গেছে। এ মাসের মধ্যে এসব অবধৈ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, কোন দখলদারকে ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ১৮৯০ সালে মা ‘শ্যামা সুন্দরী’র নামে খালটি খনন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার, রংপুরের প্রথম পৌর চেয়ারম্যান জানকী বল্লভ সেন। কেল্লাবন্দে ঘাঘট নদ থেকে নগরীর ১৫টি ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে খনন করা হয় খালটি।
তখন থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রংপুরের সৌন্দর্য বর্ধনে শ্যামা সুন্দরী খাল অন্যতম ভূমিকায় ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এটি ময়লা আবর্জনা আর বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শ্যামা সুন্দরী খালটির জীর্ণদশা। ময়লা, আবর্জনা ও দূষণে বিপর্যন্ত। আর খালটি সংস্কারে রংপুর বাসীর দাবিও দীর্ঘদিনের।