রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা সরিষায় স্বপ্ন বুনছেন এবার। গতবছরের চেয়ে এবার ৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। ফলে হলুদে হলুদে ভরে রয়েছে এ অঞ্চলের ক্ষেতগুলো, শোভা পাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুলে ফুলে। ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষক ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। আশা করছেন বাম্পার ফলনের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রংপুরের পাঁচ জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৯৪১ হেক্টর জমিতে। এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত সরিষার আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৩৮৬ হেক্টরে। গেল বছর আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৪৮৯ হেক্টরে। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৭০.৫৪ শতাংশ অর্জন হলেও তা গেল বছরের চেয়ে ৬ হাজার হেক্টরের বেশি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধান ফসল বোরো ধান চাষের আগে রবিশস্য হিসেবে সরিষার চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জমিতে সরিষা চাষের পরই বোরো ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করা শুরু হয়। এছাড়া সরিষা চাষের পর ওই জমির উর্বরাশক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও ওই জমির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই পরবর্তী ফসল উৎপাদনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে রবি ফসল সরিষা।
এবছর সসবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। এ জেলায় ১১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে লালমনিরহাট জেলায়। এখানে মাত্র ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এছাড়া রংপুরে ৩ হাজার হেক্টর, গাইবান্ধায় ৬ হাজার ২৫ হেক্টর ও নীলফামারীতে ৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ফলে হলুদে হলুদে ভরে গেছে এ অঞ্চলের প্রকৃতি। আবহাওয়া অনুক‚ল থাকায় সরিষা খেতে লক লক করে বেড়ে উঠছে। ফসল সরিষায় স্বপ্ন বুনছেন।
ঘরে ওঠার সময় বর্তমান বাজার অনুযায়ী কৃষক দাম পেলে তারা এবার বাড়তি দুটো পয়সার মুখ দেখবেন এমনটাই আশা করছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
রংপুর সদরের উত্তম এলাকার সরিষা চাষি ইমরান আলী, হাফিজুর রহমান, স্বপন মিয়াসহ বেশকিছু কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্তমানে তাদের সরিষা খেতের বয়স হয়েছে ৩৭ থেকে ৪৯ দিন। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের কাচনার সফল সরিষার চাষি দিপক রায় দিপু জানান, ৩০ শতক জমিতে ভালো চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর সরিষা ভালো হবে। আর দেড় থেকে দুই মাস পরই এ ফসল ঘরে উঠবে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও তারা সরিষা আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।
সরিষা আবাদে অন্য ফসলের চেয়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম এবং লাভ বেশি। মাত্র চারটি চাষ দিয়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। এছাড়া দুইবার পানি ও একবার সার দিয়েই সরিষার আবাদ করা যায়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন পাওয়া যায় ১ হাজার ৪০০ কেজির মতো। নভেম্বরের প্রথম থেকেই এ ফসল বপন করা হয় এবং ফেব্রয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়। প্রতি বিঘায় ফলন পাবেন ৫ থেকে ৬ মণ। বিঘায় খরচ পড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপর। এ বাজার থাকলে কৃষকের প্রতি মণে লাভ হবে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সারোয়ারুল হক বলেন, জেলার অধিকাংশ সরিষা চাষিকে সম্পূরক রবি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে সরিষার এ বীজগুলো সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশিরভাগেই দানা ও ফুল এসে গেছে, কিন্তু চলমান শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত হবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, সরিষার বর্তমান বাজারদর যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অবশ্যই কৃষক লাভবান হবেন। গত বছর বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সরিষার আবাদ কম হয়েছিল। এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূল থাকায় সরিষার আবাদ গেল বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে।
জেএম/রাতদিন