সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন তুরস্ক। সফরকালে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন কাযক্রম, বাংলাদেশের নানা বিষয়ে কথা বলেন তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির সাথে। সংবাদমাধ্যমটিতে ইংরাজিতে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকার বাংলায় অনুবাদ করে পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন রবি ইসলাম :
বাংলাদেশ দরিদ্র, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক মানুষদের সাহায্য করার জন্য সরকার প্রদত্ত সামাজিক সেবা একটি রোল মডেল হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ।
বাংলাদেশের সামাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, “আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমাদের দেশ আগামী পাঁচ বছরে সামাজিক কল্যাণের একটি রোল মডেল হবে।”
তুরস্কের পারিবারিক ও সামাজিক নীতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত রাজধানী আন্কারার একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় তিনি একথা বলেন ।
মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য তার মন্ত্রণালয় যে সমস্ত প্রকল্প ও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সে বিষয়ে কথা বলেন তিনি ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে, তার সরকারকে উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে দাবি করেন। আহমেদ অঙ্গীকার করেছেন যে তার দেশ সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে ।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বলেছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা লাভ করেছে l ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের যে তিনটি সূচক রয়েছে তা অর্জনে সক্ষম হবে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য তার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পসমুহ বর্ণনা করে আহমেদ জানান, তারা বিধবা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য ভাতা প্রদান করছে ।
তিনি আরো বলেন, “আমরা ক্যান্সার, কিডনি, লিভার, সিরোসিস, প্যারালাইসিস এবং আরো অনেক জটিল রোগের জন্য রোগী প্রতি ৫০ হাজার (প্রায় ৬শ ইউএস ডলার) প্রদান করি ।
আহমেদের মতে, ১৫ লাখ ৬৪ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে ১ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষকে তার মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে ।
তিনি বলেন, “আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা বাকি সব প্রতিবন্ধী মানুষকে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করবো ।” এর সাথে তিনি যোগ করেন, “তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সেবা প্রদান করা হবে। সরকারি খাতে ১ শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ।”
“আমরা ৪০লাখ জনকে বয়স্ক ভাতা দিই । প্রায় ৮ লাখ নারী বিধবা ভাতা পান । আমরা গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ তৈরি করার জন্য সুদবিহীন ঋণ বিতরণ করছি । তারা সুদ মুক্ত ঋণ দ্বারা স্বনির্ভর হতে পারবে।
তিনি আরো বলেন যে, তার সরকার দেশের সকল জেলায় চাইল্ড কেয়ার সেন্টার তৈরি করেছে, যাতে করে তারা পথ-শিশুদের মূলধারার সমাজে ফিরিয়ে আনতে পারেন ।
সরকার দারিদ্র্য কমাতে কঠোর পরিশ্রম করছে এবং এই ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে । তিনি বলেন যে, ইতিমধ্যে দেশের বেশ কিছু এলাকা ভিক্ষুক-মুক্ত হয়েছে। “খুব শীঘ্রই দেশ ভিক্ষুক মুক্ত হবে ।আমরা ভিক্ষুকরদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছি।”
এ ছাড়াও তার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, মাতৃসেবা কেন্দ্র, শিশু সুরক্ষা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠির পূণ:র্বাসন এর মতো উন্নয়ন কর্মসূচি এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করছে।
তুরষ্কের সাথে তার মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি চুক্তি করার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: “আমাদের এ ধরনের পরিকল্পনা আছে ।
“আঙ্কারা সফরের সময় আমি আমাদের সরকারের জন কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ আলোচনা করেছি । এক্ষেত্রে তুরষ্কের প্রচেষ্টা ও প্রশংসনীয় সাফল্যের কথা আমি শুনেছি, “যোগ করেন বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ।
এইচএ/রাতদিন