গ্যারি স্টিড। এক সময় ছিলেন ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসের গ্রাউন্ড স্টাফ (মাঠকর্মী)। লর্ডসের দরজা-জানালা পরিষ্কারের কাজ করতেন। ২৯ বছর পর সেই ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে তার কোচিংয়েই এবারের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলছে নিউজিল্যান্ড।
১৪ জুলাই ফাইনালের ৪৮ ঘন্টা আগে সেই লর্ডসের প্রেস কনফারেন্সে দেশি-বিদেশি অনেক সাংবাদিকের সামনে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অবলীলায় বলে দিলেন, ১৯৯০ সালে এমসিসির (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব, লর্ডসের মালিক ক্লাব) স্টাফ ছিলাম আমি। গ্রাউন্ড স্টাফ হিসেবেও কাজ করেছি।’
নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত সাংবাদিক এ্যান্ড্রু আর যোগ করলেন, ‘হ্যাঁ, ১৯৯০ সালে এমসিসির হয়ে কাজ করতে এসেছিলেন গ্যারি স্টিড। সে সময় গ্যারি ছিলেন শুধুই এমসিসির স্টাফ। লর্ডসের দরজা-জানালা পরিষ্কারের কাজও করেছেন।’
গ্যারি স্টিড জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন এক বছর পুরো হয়নি। গত বছর আগস্টে নিউজিল্যান্ডের প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন গ্যারি। বছর না ঘুরতেই তার কোচিংয়ে দল বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চের ফাইনালে।
১৪ জুলাই লর্ডসের ফাইনালে স্বাগাতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবার আগে এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমকটিই উপহার দিয়েছে গ্যারি স্টিডের শিষ্যরা। কেন উইলিয়মাসনের নেতৃত্বে বিরাট কোহলির ভারতকে ২৮ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
এমনিতেই কিউইরা মাঠ ও মাঠের বাইরে বিনয়ী, গ্যারি স্টিড যেন তাদের চাইতেও এক কাঠি সরেস।
প্রেস কনফারেন্সে কোচ গ্যারি একবারের জন্য মুখ থেকে উচ্চারণ করেননি, ‘ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিততে চাই আমরা। ’
পরোক্ষে বুঝিয়ে দিলেন লক্ষ্য অটুট, কাপ জয় । তবে সেই কথাটি উপস্থাপন করলেন ভিন্ন ভাবে, ‘ আমরা কাপ জয়ের কথা মাথায় নিয়ে নয়, ১৪ জুলাই লর্ডসে খেলতে নামবো নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটা দিতে। আমরা যতটা ভাল পারি, ঠিক ততটাই ভাল খেলার চেষ্টা থাকবে।’
নিউজিল্যান্ডের এক ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ পরিবারের সন্তান গ্যারি স্টিড। দেশের হয়ে ৫ টি টেস্ট খেলেছেন। ব্যাটসম্যান কাম লেগস্পিনার গ্যারির টেস্ট ক্যারিয়ার মোটেই উজ্জ্বল নয়।
২০০৮ সালে কোচ হন কিউই নারী ক্রিকেট দলের। তার কোচিংয়ে নিউজিল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল ২০০৯ সালে বিশ্ব নারী ক্রিকেট কাপের ফাইনাল খেলে এবং ২০১০ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টি কাপ ফাইনাল খেলে।
স্টিডের পিতা ডেভিড কেন্টারব্যুরির হয়ে ৮০ টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেছেন। একই দলের হয়ে খেলেছেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও।
চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে নিউজিল্যান্ডকেই মনে করা হচ্ছিল সবচেয়ে পিছিয়ে। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে ভারতকে বিদায় করে ফাইনালে উঠে যায় তারা। স্টিড জানালেন, তাদের তিনটি লক্ষ্যের প্রথম দুই ধাপে ছিল সেমিফাইনাল-ফাইনালে ওঠা। আর বাকিটা সারতে চান ১৪ জুলাই, ‘দল হিসেবে আমাদের তিনটি লক্ষ্য ছিল। দুটি পূরণ হয়েছে, আরেকটির জন্য ফাইনালে লড়ব।’
এখন দেখার বিষয়, গ্রাউন্ড স্টাফ থেকে উঠে আসা কোচের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফিটি আরও সমুজ্জ্বল হয় কি না?