শুক্রবার, ১ মে। সকাল সাড়ে ১০ টা। নীলফামারীর সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠ। টিসিবি’র ডিলার শহরের শেরে বাংলা সড়কের মেসার্স সাকিল ট্রেডার্স এর একটি ছোট ট্রাক থেকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করছিলো। সেখানে টিসিবর পণ্য কিনতে তিন লাইনে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার নানা বয়সী শত শত নারী পুরুষ। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার লেশ মাত্র অবকাশও ছিল না সেখানে। একজনের গাঁয়ের সঙ্গে আরেকজন একেবারে গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হুড়াহুড়ি করছেন তারা।
টিসিবি ডিলারের পণ্য বিক্রির তদারকির জন্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন সৈয়দপুর উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। তিনিসহ ডিলারের লোকজন পণ্য কিনতে আসা লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনের দাঁড়ানোর জন্য বার বার অনুরোধ করছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা ? এ রকম পরিস্থিতিতে তদারকি কর্মকর্তা ডিলারের লোকজনকে পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন অনেকটা বাধ্য হয়েই।
পরবর্তীতে তিনি সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনকে মুঠোফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার। তাঁর আগে সেখানে পৌঁছেন সৈয়দপুর থানার দুইজন পুলিশ সদস্য। এসিল্যান্ড এসে লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন। পরে সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনের দাঁড়ানোর পর পুনরায় পণ্য বিক্রি শুরু হয় সেখানে। তবে তার আগেই বরাদ্দকৃত অর্ধেকেরও বেশি পন্য বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিসিবি’র ডিলার মেসার্স সাকিল ট্রেডার্স প্রথম পর্যায়ে ৩ হাজার কেজি চিনি, ৪ হাজার ৫শ’ লিটার সোয়াবিন তেল, ৬ শ’ কেজি মশুর ডাল, এক হাজার ৫শ’ কেজি ছোলা ডাল (বুট) এবং ৬০ কেজি খেজুর বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত ওই সব পণ্য গেল তিন দিনে শহরের তিনটি স্পটে বিক্রির নির্দেশ দেন উপজেলা প্রশাসন। সে নির্দেশনা মতে টিসিবির পণ্য গেল ২৯ ও ৩০ এপ্রিল যথাক্রমে শহরের পার্বতীপুর মোড়ে এবং ওয়াপদা মোড়ে বিক্রি করা হয়। সর্বশেষ গেল ১ মে বিক্রি করা হয় সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে। একজন ক্রেতা এক সঙ্গে ৮০ টাকা লিটার দরে ৫ লিটার তেল, ৫০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি, ৫০ টাকা কেজি দরে ১কেজি মশুর ডাল এবং ৬০ টাকা কেজি দরে ২কেজি ছোলা ডাল (বুট) কিনতে পারবেন।
এদিকে, সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত পণ্যের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুন বেশি। ফলে মানুষজন সূলভমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। আর লাইরে দাঁড়িয়েও কে কার আগে নিবেন তা নিয়ে রীতিমতো হুঁড়োহুঁড়ি করছেন। সেই সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি। ফলে ক্রেতা বেশি হওয়ায় ডিলাররা চাহিদা মতো পণ্য সরবরাহ দিতে পারছেন না।
শুক্রবার সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছিলেন শহরের আদানীর মোড়ের বাসিন্দা মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ২৯ এপ্রিল পার্বতীপুর মোড়ে পণ্য কিনতে লাইনের দাঁড়িয়েছিলেন। কিš ‘ওই দিন মানুষের ভিড়ে আগেভাগেই ডিলারের বরাদ্দকৃত পণ্য শেষ হওয়ার সেখানে কিনতে পারেননি তিনি। তাই তিনি আজ সকাল ৬ টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।
টিসিবির পণ্য কিনতে ঢেলাপীর উত্তরা আবাসন থেকে এসেছিলেন আশরাফ আলী। তিনি শহরের একটি টেইলার্স দোকানের কারিগর। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দোকানপাট বন্ধ। তাই বর্তমানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সঞ্চিত টাকা পয়সাও ছিল, তাও প্রায় শেষ। তাই সূলভমূল্যে পণ্য কিনতে এসেছেন তিনি। শহরের মুন্সীপাড়া থেকে পণ্য কিনতে এসেছিলেন শরীফ। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। শরীফ বলছিলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এক মাসের অধিক সময় ধরে দিন বসে আছেন। কোন কাজ কর্ম নেই। পৌরসভা এলাকার ভোটার না হওয়ার সরকারি খাদ্য সহায়তাও মিলছেন না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
আবার দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে টিসিবির পণ্য কিনতে না পেরে অনেকেই ফিরে যান। পত্রিকা হকার হায়দার আলী তাদেরই একজন। তিনি পত্রিকা বিলি না করে সকালে এসেও পণ্য কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছিলেন।
টিসিবির পণ্য বিক্রি তদারকি কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার হওয়ার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের আসার আগে টিসিবর পণ্য বিক্রি শুরু করা হয়। তাই শুরুতেই কিছুটা বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে সামাজিক দূরত্ব মেনে সুশৃংখলভাবে পণ্য বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে।
জেএম/রাতদিন