নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিদেশী ড্রাগন ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা মো. রাশেদুজ্জামান মানিক। এরই মধ্যে ড্রাগন ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদা থাকায় সম্প্রতি তিনি বাগানটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন।অন্যদিকে তাঁর এই উদ্যোগে এলাকার আরো অনেকে এ ফল চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
রাশেদুজ্জামান মানিক উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের পাখাতিপাড়ার মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে । লেখাপড়া শেষে চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে বাবা-দাদার কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন মানিক। তাঁদের পৈত্রিক জমিতে ধান, পাট, সরিয়া, রসুন, পিঁয়াজসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করেন আসছিলেন তিনি। ফলে এলাকার একজন আদর্শ কৃষক হওয়ায় সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল অনেক আগে থেকেই।
গত ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি ফলের দোকানে প্রথম বিদেশী ড্রাগন ফল দেখতে পেয়ে বাড়ি ফিরে ড্রাগন ফলের বাগান করবেন বলে মনস্থির করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকেও ড্রাফন ফল বাগান করার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে।উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এবং রংপুরের বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্বল্প পরিসরে একটি ড্রাগন ফল বাগান করেন তিনি।
বাগানে ২০১৬ সালের জুন মাসে সাদা ফ্লেশ/ পিংক স্কিন, সাদা ফ্লেশ/ ইয়েলো স্কিন এবং কালার ফ্লেশ/ পিংক স্কিন তিন জাতের ড্রাগন চাষ করে যাত্রা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার পাখাতিপাড়ার বাড়ির পাশে মাত্র ১০ শতক জমির বাগানে ১৬০ টি ড্রাগন ফল গাছ রয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক নির্দেশনা ও পরামর্শ নিয়ে নিজেই বাগানের পরিচর্যা করতে থাকেন তনি।
ফল বাগানে রাসায়নিক পরিবর্তে নিজের তৈরি কেঁচো সার প্রয়োগ করেন তিনি। তাঁর সার্বিক পরিচর্যায় দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০১৮ সালে তাঁর বাগানের ড্রাগন ফলের গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়।
গত ২০১৮ সালে ড্রাগন ফল বাগানে ফলন আসার পর থেকে চলতি ২০২০ সাল পর্যন্ত ৯ লক্ষাধিক টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৪শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এছাড়াও তিনি বাগান থেকে ড্রাগন ফলের চারাও বিক্রি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার বেশি।
এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একই এলাকার জনৈক রফিকুল ইসলাম নামের একজন তাঁর বাগান থেকে ৬০টি চারা নিয়ে একটি বাগান করেছেন। ওই চারাগুলো মানিক সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিয়েছেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি বিভাগের কামারপুকুর ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান আশা বলেন ড্রাগন ফল সুস্বাদু ও মিষ্টি। এ ফলের চাষও খুব সহজসাধ্য। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া ড্রাগন চাষ করে যে কোন ফসলের তুলনায় ৩/৪ গুন বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। মানিকের ড্রাগন ফলের বাগান দেখে এলাকার অনেকই এখন ড্রাগন চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগম বলেন, কৃষক রাশেদুজ্জামান মানিক একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ইতিমধ্যে তিনি ধান,পাট, আলু, ভূট্টা, রসুন, পিঁয়াজসহ বিভিন্ন রকম শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে করে জেলার শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র মাঝারী উদ্যোক্তার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ড্রাগন ফল বাগানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদে রাশেদুজ্জামানকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেএম/রাতদিন