এবারের ঈদেও কোরবানির চামড়ার দর পতনে চরম বিপাকে পড়েছেন নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত লিল্লাহ বোডিংগুলো কর্তৃপক্ষ। কারণ ঈদুল আজহায় দানে পাওয়া কোরবানির চামড়া বিক্রি করেই সারা বছর চালাতে হয় সেগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরই কোরবানির পর মানুষজন চামড়াগুলো মূলত স্থানীয় মসজিদ, এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিগুলোতে দেয়। আর এ সব সংগৃহিত চামড়া বিক্রির অর্থে এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ে দ্বিনি শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবার যোগান হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের মতো এবারেও চামড়ার দাম না থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ এবারে কোরবানিতে পাওয়া চামড়া পানির দামে বিক্রি করে যে অর্থ মিলবে তাতে ওই সব দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের এক মাসের খাবারও যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না।
সৈয়দপুর শহরেরআল-জামায়েতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম রুহুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ হারুন রেয়াজী জানান, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় ১৯২৬ সালে। এই মাদরাসাটিতে বর্তমানে প্রায় আড়াই শত শিক্ষার্থী দ্বিনি শিক্ষা গ্রহণ করছে।
তিনি জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এলাকার লোকজন কয়েক শত কোরবানি পশুর চামড়া মাদরাসায় দান করেন। আর ওই চামড়া বিক্রির অর্থে প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহি বোডিংয়ে থাকা আবাসিক প্রায় কয়েক শত শিক্ষার্থী ছয় মাসের খাবার সংস্থান হয়। এবারেও ৪০০টি গরুর চামড়া ও ২৩৬টি ছাগলের চামড়া মিলেছে। কিন্তু চামড়া দাম নেই বললেই চলে।
শহরের কাজীপাড়ায় অবস্থিত আল জামিয়াতুল আবারিয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ আবুল কালাম কাসেমী জানান, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিংয়ে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী ইসলাম শিক্ষা গ্রহন করছেন। তারা সবাই আবাসিক শিক্ষার্থী। এবারের কোরবানির ঈদে মাদরাসা ফান্ডে যে গরুর এবং ছাগলের চামড়া মিলেছে তা বিক্রির অর্থে মাদরাসর লিল্লাহ বোডিংয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের এক-দেড় মাসেরও খাবার চালানো যাবে না। বছরের বাকি মাসগুলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কিভাবে খাবার দিবেন তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা।
মিস্ত্রিপাড়ার এলাকার বিশিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মো. শওকত আলী বলেন, ‘আমরা বংশপরম্পরায় চামড়া ব্যবসায় জড়িত। দীর্ঘদিন যাবৎ ট্যানারি মালিকদের কাছে আমার বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। আশা করেছিলাম এবারে ঈদের আগেই হয়তো বকেয়া টাকা ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করবেন। কিন্তু তারা একটি টাকাও দেননি। তারপরও নিজের কিছু পুঁজি এবং ধারদেনা করে চামড়া কিনেছি।’
এবি/রাতদিন