‘আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভুল করেছি, তাই আজ আমরা কান ধরে, হাঁটু গেড়ে, ক্ষমা চাইছি। আমাদের জীবন বাঁচান’
কান ধরে, হাঁটু গেড়ে মানববন্ধনের আদলে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। বুধবার, ৩০ জানুয়ারি বিকেলের দিকে।
এসময় তাদের বুকে ঝুলতে দেখা গেছে নানা ধরণের প্লাকার্ড। কেউ কেউ পড়েছিলেন কালো কাপড়ের জমটুপি। হাতে ছিল ফাঁসির দড়ি।
অন্য কোনো কারণে নয়। নিজেদের শিক্ষা জীবন বাঁচানোর দাবিতেই তাদের ব্যতিক্রমি এ প্রতিবাদ।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) গত নভেম্বর থেকে শিক্ষকদের আন্দোলনে বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেছে।
ঘন্টাখানেকের প্রতিবাদী এ কর্মসূচিতে মহাসড়কের দু’ধারে কানে ধরে হাঁটু গেড়ে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
এসময় তাদের বুকে ঝুলছিল, ‘আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভুল করেছি, তাই আজ আমরা কান ধরে, হাঁটু গেড়ে, ক্ষমা চাইছি। আমাদের জীবন বাঁচান’- এ ধরণের আকুতি সম্বলিত প্লাকার্ড।
‘শিক্ষা নয় অপরাজনীতিতে চ্যাম্পিয়ন’; ‘আমরা বলি হতে আসিনি’, ‘পাপের প্রায়শ্চিত করতে এসেছি’; ‘রাজনীতির শিকল নিপাত যাক, কলমের কালি মুক্তি পাক’; ‘শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি নিপাত যাক, শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাক’ -এ ধরণের প্লাকার্ডও ঝুলছিল কারও কারও বুকে।
প্রতিবাদে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানান, তারা নিরুপায় হয়েই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। কারণ আড়াই মাস ধরে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না।
শিক্ষকরা স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন-এমন অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ‘শিক্ষকদের পা ধরেও আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা নিতে রাজি করাতে পারিনি’।
প্রসঙ্গত গত বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূর, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও নারী শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানির বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার বহিষ্কার এবং দুই সহকারী অধ্যাপকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছেন নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকরা।
আন্দোলনের অংশ হিসাবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন। আর তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমস্যা সমাধানে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারি রাতে শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। তবে কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক।
হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘কোনো পক্ষ ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় আলোচনায় কোনো সমাধান হয়নি’।
এবি/৩১.০১.১৯