হিন্দু ধর্মাবলম্বী কিশোর নয়ন রায় চলমান জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে নয়ন কোরআন মাজিদ ও আরবিসহ কয়েকটি বিষয়ে ভালো পরীক্ষাও দিয়েছে বলে জানিয়েছে তার শিক্ষকরা।
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় শেখ বাধা রেজিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে জেডিসিতে অংশ নিয়েছে সে।
একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের প্রামাণিক পাড়ার রতন রায়ের ছেলে নয়ন রায়। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানার প্রচণ্ড আগ্রহ থেকেই সে মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। আর এ মাদ্রাসা থেকেই চলমান জেডিসি পরীক্ষা দিচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর এ শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে নয়নের বাবা রতন রায় জানান, ছোটবেলা থেকেই ইসলাম সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ থেকেই আমার ছেলে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। আর তার মাদ্রাসা শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছাতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাঁধা নেই।
নয়ন জানান, তার এমন আগ্রহে বা মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কখনও কোনো অভিযোগ বা বাঁধা আসেনি। কেউ এর বিরোধিতাও করেনি।
নয়ন আরও বলে, স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় মাদ্রাসার কিছু ছাত্রদের সঙ্গে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সখ্য বাড়ে। এ সময় মাদ্রাসার ছাত্রদের চলাফেরা, আচার-আচরণ ও নিয়মানুবর্তিতাই তাকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানার ব্যাপারে প্রভাবিত করে। আর তখনই সেসব মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থানীয় শেখ বাধা রেজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয় সে।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, নয়ন রায় যে হিন্দু তা তাদের জানাই ছিল না। কারণ সে টুপি-পাঞ্জাবি পরা ছবি দিয়েই পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করেছে। আর নয়ন তার পরিচয় গোপন রেখে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। তাছাড়া মাদ্রাসায় দেয়া তথ্যে সে কোথাও তার ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করেনি। সেখানে রায় উপাধি না লেখায় সবাই তাকে মুসলমানই ভেবেছে। কারণ নয়ন ও রতন অনেক মুসলিমদেরও নাম হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে নয়ন জানায়, হিন্দু পরিচয় পেলে যদি শিক্ষকরা তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে সুযোগ না দেন, তাই পরিচয় গোপন রেখেছিল সে।
নয়ন আরও জানায়, মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর আরবি বিষয় একটু কঠিন লাগতো। কিন্তু আলাদাভাবে প্রাইভেট পড়ে আরবি বিষয় আয়ত্ব করে সে। ভবিষ্যতে মাদ্রাসা থেকেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় নয়ন।