এক সেকেন্ড লাগবেনা পদত্যাগ করতে: টিপু মুনশি

পিয়াজের দাম বাড়ার দায় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘আমাকে বহুবার বলা হয়েছে (অসাধু ব্যবসায়ীদের) জেলে দেন, ক্রসফায়ারে দেন। কোথাও বলেছে, বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না পদত্যাগ করতে। কোনো সমস্যা নাই আমার। তাতে দেশের সবকিছু, বিশেষ করে পিয়াজের দাম যদি ঠিক হয়ে যেত, তাহলে আমার তো কিছু যায়-আসে না। এই মন্ত্রিত্ব কাজ করার জন্য, জব করার জন্য।’

মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটি এ সভার আয়োজন করে। পিয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর যখন ভারত পিয়াজ বন্ধ করে দিল, সেদিন সন্ধ্যার সময় ঢাকার বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ার কথা নয়। পিয়াজ তো তখন স্টকে ছিল। কোনো কোনো ব্যবসায়ী সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগটা নিয়ে নিয়েছেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর...

ব্যবসায়ীদের ‘মানবিক মূল্যবোধ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিপু মুনশি বলেন, ‘যারা দুর্ভিক্ষের সামনে, ক্রাইসিসের সামনেও নিজেদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করে না, তারা ব্যবসায়ী হতে পারে না। দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে, ক্রাইসিসে রেখে আপনারা প্রফিট করেন সমস্যা নাই, লজিক্যাল প্রফিট করেন। ৫ টাকা লাভ রেখে বাজারে পিয়াজ ছাড়েন। এরপরও বাজারে পিয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকা হবে।’ বর্তমানে যেসব পিয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে তার দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকার বেশি নয় বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

দেশের তিনটি বড় কোম্পানির নাম উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সংকট মোকাবিলায় পিয়াজ আমদানিতে যাওয়া এসব কোম্পানির পিয়াজ বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে। ৪০ দিনের মধ্যে এক লাখ টন পিয়াজ বাজারে আসবে।’ পিয়াজে কোনো মুনাফা না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে কেজিপ্রতি পিয়াজের ব্যয় ৪২ টাকা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে তারা টিসিবিকে যা দিয়েছে, সেটা সর্বমূল্যে খরচ পড়েছে সাড়ে ৪২ টাকা। সেই দামের কস্ট প্রাইসের কাগজ পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে তারা। তবে সমস্যাটা হয়েছে, এই পরিমাণ যথেষ্ট নয় আমাদের বাজার সার্ভ করার জন্য। আমাদের আরও পিয়াজ দরকার।’ পিয়াজকান্ডের পর এবার সরকারের ‘শিক্ষা হয়েছে’ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘ক্রাইসিস আমাদের আছে। তবে এই ক্রাইসিস সব সময় থাকবে না। পিয়াজ ডাবল-ট্রিপল দামে কিনে আমরা মরে যাব না। আমাদের শিক্ষা হয়েছে। কথায় আছে, কখনো কখনো বিপদ সম্পদে রূপান্তর হয়। ক্রাইসিস আমরা ফেস করব, ওভারকামও করব।’

পিয়াজের ওপর ভারতনির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ওভারকাম করতে হলে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকব, আর ভারত যখন খুশি বন্ধ করে দেবে, তাহলে আমরা কীভাবে পিয়াজের বাজার ঠিক রাখব!’ চাষিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি আগামী তিন বছরের মধ্যে পিয়াজ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সরকারি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে টিপু মুনশি বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা ভারতে (পিয়াজ) রপ্তানি করব।’

মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এতে সূচনা বক্তব্য দেন সদস্যসচিব আবদুস ছাত্তার। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
এসকে/রাতদিন