‘মুজিব জন্মশতবার্ষিকী: শেখ মুজিব কীভাবে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতা হয়ে উঠেছিলেন?’-এই শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। পাঠকদের জন্য হুবহু তা তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠার পেছনে শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম একটি আদর্শিক ভিত্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
কিন্তু তিনি রাজনীতির মাঠে যাত্রা শুরু করেছিলেন ছাত্রজীবনে মুসলিম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে । পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও তাঁর সমর্থন ছিল।
সেই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে শেখ মুজিব কীভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতা হয়েছিলেন? কীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম ভিত্তি হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা? বিভিন্ন সময়ই এসব প্রশ্ন অনেককে ভাবিয়েছে।
ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাষ্ট।
এখন সেই বাড়িটি পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে। তার বিভিন্ন কক্ষে ঢুকলে চোখে পড়ে – দেয়ালে ঝুলছে ক্যালেন্ডার। সেই ক্যালেন্ডার থেমে আছে সেই ৭৫ এর অগাষ্ট মাসে। সবকিছুই হয়ে আছে সেই হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী । সেখানে কথা হচ্ছিল কয়েকজন দর্শকের সাথে।
তাদের একজন একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বানু। তিনি বলছিলেন, শেখ মুজিব মুসলিম লীগের মাধ্যমেই রাজনীতিতে এসেছিলেন, কিন্তু পরে নিজেকে পরিবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে অন্যতম একটি ভিত্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
নিলুফার ইয়াসমিন শিক্ষকতা করেন একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। তিনি বলছেন, শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতিতে নিজে যেমন তৈরি হয়েছিলেন, তিনি ধাপে ধাপে গোটা জাতিকেই এর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।
“অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে আমাদের শেখ মুজিব এক সময় বুঝতে পারলেন এবং তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন যাতে বাঙালির জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র করা যায়।”
“আমরা যে বাঙালি, সেই পরিচয় এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেই ভিত্তি করেছিলেন” – বললেন নিলুফার ইয়াসমিন।
কিন্তু শেখ মুজিব কেন মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন-বিভিন্ন সময় রাজনীতির আলোচনায় এই প্রশ্ন এসেছে।
বিশ্লেষকরাও নানাভাবে এর বিশ্লেষণ করে থাকেন।
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক খুরশিদা বেগম শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তিনি বলেছেন, শেখ মুজিব অল্প বয়সে একটা সময়ের প্রভাবে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন। তবে মুসলিম লীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও তথনই মুজিবের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারণা জন্ম নিচ্ছিল এবং সেজন্য তাঁর মাঝে মুসলিম লীগ নিয়ে অল্প সময়েই একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল বলে তিনি মনে করেন।
“আমরা বিষয়টাকে দেখবো দুইভাবে। একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মুসলিম ঘরের সন্তান। ঐ সময়টায় ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব এসেছে অর্থাৎ পাকিস্তান প্রস্তাব, পাকিস্তান আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটছে।”
“ঐসময় মুসলমান পরিবারের ছেলে হিসেবে মুসলিম লীগের যে রাজনীতি বা রাজনৈতিক যে কথাবার্তা ছিল যে, ব্রিটিশরা যদি চলে যায় এবং মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র না হলে মুসলিমদের শোচনীয় অবস্থা হবে। এগুলোতে উনি প্রভাবিত হয়েছিলেন মনে হয়।”
“কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উনি বলছেন, যখন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বক্তৃতা শোনেন, তখন উনি ভেতরে ভেতরে চঞ্চল হয়ে ওঠেন। এটাও কিন্তু মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে তাঁর দ্বান্দ্বিক অবস্থান।”
খুরশিদা বেগম আরও বলছেন, “আমরা বিষয়টা এভাবে দেখবো যে তখন তার বয়স কত ছিল? তখন তিনি ছিলেন কৈশোর এবং তারুণ্যের সন্ধিক্ষণে। ঠিক এই বয়সে রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বা অনুভবগুলো তরল অবস্থায় আছে। সেটায় যে দ্বন্দ্বের সূচনা হচ্ছে, তা খুবই ইতিবাচক। এই দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু তাঁর পথ খুঁজে নিয়েছেন।”
সেই ১৯৩০ এবং ৪০ এর দশকের সময়ের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে এই অঞ্চলের দরিদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার চিন্তাকে পাকিস্তান আন্দোলনের পেছনে মুল বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান মনে করেন, জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে দরিদ্র মুসলিমদের অধিকার প্রতিষ্ঠার করা সম্ভব হতে পারে, এমন একটা চিন্তা থেকে শেখ মুজিব পাকিস্তান আন্দোলনে গিয়েছিলেন।
কিন্তু মুসলিম লীগে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিমসহ উদারপন্থী অংশের সাথে ছিলেন বলে অধ্যাপক রওনক জাহান উল্লেখ করেছেন।
“শেখ মুজিব ভেবেছিলেন, দরিদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশেষ করে কৃষকরা জমিদারদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। সেই চিন্তা থেকে তিনি সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিম গ্রুপের সাথে মুসলিম লীগে ছিলেন। কিন্তু তিনি কখনও সাম্প্রদায়িক চিন্তা লালন করেন নাই।”
বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন, শেখ মুজিবের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে। তাঁর মুসলিম লীগে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রভাব একটা বড় কারণ ছিল।
শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্নজীবনী’ বইয়ে সেই প্রেক্ষাপট লিখেছেন।
তাতে তিনি লিখেছেন যে, ১৯৩৮ সালে তিনি গোপালগঞ্জে মিশন স্কুলের ছাত্র ছিলেন, তখন এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সেখানে সফরে গেলে তাঁর সাথে তাদের পরিচয় হয়। সেই থেকে একটা যোগাযোগ তৈরি হলে পরের বছর ৩৯ সালে তিনি গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগ গঠন করেছিলেন।
অসামাপ্ত আত্নজীবনীতে শেখ মুজিব লিখেছেন, “স্কুল পরিদর্শনের পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আমাকে ডেকে নিলেন খুব কাছে, আদর করলেন এবং বললেন, তোমাদের এখানে মুসলিম লীগ করা হয় নাই? বললাম, কোনো প্রতিষ্ঠান নাই। মুসলিম ছাত্রলীগও নাই। তিনি আর কিছু বললেন না , শুধু আমার নাম ও ঠিকানা লিখে নিলেন।”
“কিছুদিন পর আমি একটা চিঠি পেলাম, তাতে তিনি আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এবং লিখেছেন, কোলকাতা গেলে তার সঙ্গে যেন দেখা করি। আমিও তাঁর চিঠির উত্তর দিলাম। এইভাবে মাঝে মাঝে চিঠিও দিতাম।”
গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগ গঠনের বিস্তারিত রয়েছে তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনী বইয়ে। তিনি লিখেছেন, “১৯৩৯ সালে কোলকাতা যাই বেড়াতে। শহীদ সাহেবের সাথে দেখা করি। শহীদ সাহেবকে বললাম, গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করবো এবং মুসলিম লীগও গঠন করবো। খন্দকার শামসুদ্দীন সাহেব এমএলএ তখন মুসলিম লীগে যোগদান করেছেন। তিনি সভাপতি হলেন ছাত্রলীগের। আমি হলাম সম্পাদক। মুসলিম লীগ গঠন হলো। একজন মোক্তার সাহেব সেক্রেটারি হলেন, অবশ্য আমিই কাজ করতাম। আমি আস্তে আস্তে রাজনীতিতে প্রবেশ করলাম।”
বিশ্লেষকরা যেমনটা বলেছেন, মুসলিম লীগে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কট্টরপন্থী অংশের সাথে শেখ মুজিব ছিলেন না। তিনি ১৯৪৬ সালে কোলকাতার হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সহ বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
শেখ মুজিব কিভাবে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন এবং হাঁটলেন ধর্মনিরপেক্ষতার পথে?
তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনীতেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের প্রত্যাশা এবং মোহভঙ্গ হওয়ার কথা লিখেছেন।
মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে ছিলেন। এর আগের বছর তিনি জেলে থেকেই বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সেই থেকেই শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতার পথে হাঁটতে শুরু করেন বলে উল্লেখ করেন গবেষক ও শিক্ষক খুরশিদা বেগম।
“উনি কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের মনোভাব, শোষণ এবং ভাষা আন্দোলন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের ওপর যে আঘাত – এগুলোকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু খুব দ্রুত তার পরিণত বয়সে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পথে আকৃষ্ট হচ্ছেন। তিনি বাংলার সমাজের হিন্দু-মুসলমান সকলে অধিকারের কথা ভেবেছেন।”
“ভাষা আন্দোলন থেকে সূত্রপাত করেই তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পথে হাঁটতে শুরু করেন। আরেকটা বিষয় ছিল, তিনি বলেছিলেন যে পাকিস্তানের রাজনীতি পূর্ব বাংলার জন্য ক্ষতিকর। একটা পরিবর্তন দরকার।”
“এই চিন্তাগুলোই তাঁকে ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের দিকে নিয়ে এলো। উনার এই রাজনৈতিক দর্শন যত দিন গেলো, মজবুত একটা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হলো।”
ধর্মকে ব্যবহার করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসন এবং মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে তখন ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি বাঙালিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ব্যাপক সাড়া পেয়ে মুসলিম লীগের বিরোধী একটা দল গঠনের ছয় বছরের মধ্যেই শেখ মুজিব সেই দলের নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়েছিলেন।”
“যখন বঙ্গবন্ধু দেখলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা এখানে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে। তখন তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয় নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নামেন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দ কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবের কারণে বাদ দিতে হয়েছিল।”
শেখ সেলিম আরও বলছিলেন, “১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়কে যুক্ত করেছিলেন। তাঁর সেই ইশতেহার মানুষ কিন্তু গ্রহণ করেছিলো। এর ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।”
আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের চোখে শেখ মুজিব
অধ্যাপক রওনক জাহান মনে করেন, শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি নিয়ে যখন মাঠে নামেন, তখন থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে এরপর ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে তার সাথে মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেছেন, এরই ধারাবাহিকতায় মুজিবের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
“বঙ্গবন্ধু শহরে বসে রাজনীতি করেন নাই। উনি গ্রামে গ্রামে ঘুরেছিলেন। ফলে ৬০এর দশকে তিনি যখন ৬ দফা দিলেন, তখন তাতে মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেলো। তিনি সফলবাবে সাধারণ মানুষের মাঝে তাঁর দর্শন ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। তার ফলশ্রুতিতেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি।”
‘বাস্তবতা এবং সময়ের প্রয়োজন মুজিবকে তৈরি করেছিল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতা’
রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য বিষয়টা মূল্যায়ন করেন ভিন্নভাবে। মি: ভট্টাচার্য ন্যাপের রাজনীতিতে থেকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনায় স্বাধীনতার সংগ্রামে জড়িত ছিলেন। মি: ভট্টাচার্য এখন ঐক্য ন্যাপের নেতা।
তিনি বলছিলেন, ধর্মের ভিত্তিতে চিন্তা হলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাঙালি জাতির ঐক্য সম্ভব ছিল না। সেই বাস্তবতা, সময়ের প্রয়োজন এবং জনগণ শেখ মুজিবকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেতা হিসেবে তৈরি করেছিল বলে তিনি মনে করেন।
“এই অঞ্চলের মানুষের ৫৬ ভাগ বাঙালি পাকিস্তানের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই ন্যায্য হিস্যা লাভের জন্য বাঙালি পরিচয়টা একটা প্রতীক। এখানে ধর্মের ভিত্তিতে চিন্তা হলে, সেটা হবে আত্নঘাতী।”
“মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান – এরা বাঙালি হিসেবে বিভক্ত হয়ে গেলে ৫৬ ভাগের হিস্যাতো পাওয়া যাবে না। সে কারণে এই দূরদৃষ্টি এবং বাস্তবতাবোধ তাঁকে ধাবিত করেছে অনিবার্য একটি রাস্তার দিকে। সেই রাস্তাটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা।”
পংকজ ভট্টাচার্য মনে করেন, এই ধর্মনিরপেক্ষতা যতটা না তাত্ত্বিক, তার চেয়ে বাস্তব কারণে এবং ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষতা উঠে এসেছে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার নীতির অন্যতম নীতি হিসাবে এটি স্বীকৃত হয়েছে।
মি: ভট্টাচার্য বলছেন, “বাস্তবতা, সময়, মাটি এবং মানুষ থেকে উঠে আসে এই শিক্ষা, সেই শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেছিলেন। জীবনের মূল্যবান শিক্ষাটা তিনি মানুষ থেকে পেয়েছেন।”
“মুসলিম লীগের রাজনীতি করে এসে তিনি কিন্তু রূপান্তরিত হয়ে যান ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে। তিনি জায়গা পেয়ে যান ধর্মনিরপেক্ষতা বা একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাঙালির স্থপতি হিসেবে” – বলেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৭৫ এ শেখ মুজিবকে হত্যার পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে মুলনীতিগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়।
এখন আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকলেও ধর্মের ইস্যুতে কিছুটা সমঝোতা করে চলছে বলে তারা মনে করছেন।
এবি/রাতদিন