‘করোনাভাইরাস: অযথা আতঙ্ক ছড়াবেন না’- শিরোনামে আজ সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলা অনলাইন একটি খবর প্রকাশ করেছে। পাঠকদের জন্য সেটা হুবুহু তুলে ধরা হলো:
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং এতে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানির খবরের পর ছোঁয়াচে এই রোগটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
যার সবশেষ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, রবিবার রংপুরে চীনফেরত এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর চাঞ্চল্য শুরু হওয়ার খবরের কথা।
যদিও শিক্ষার্থীটির শরীরে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ ছিল না, তারপরও তাকে করোনা ইউনিটে নিয়ে আলাদা করে রাখার পর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মনে করছেন মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে, এবং সেটাকে তিনি অধিক মাত্রায় প্রচার প্রচারণা সচেতন করার চেষ্টার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় আমাদের প্রচার-প্রচারণা মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি, মানুষের মনের মধ্যে একটুখানি আতঙ্কও সৃষ্টি করে ফেলেছে।”
আবার মানুষ সঠিকভাবে সচেতন হচ্ছে কি না কিংবা আতঙ্কিত হয়ে ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় রবিবার বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ছুটে আসছিলেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন একজন স্থানীয় সাংবাদিক।
এদিন জাতীয় গণমাধ্যমগুলোর অনেক সাংবাদিককেই দেখা যায়, হাসপাতালটির নবনির্মিত করোনা ইউনিটের ঠিক সামনেই দিনভর ভিড় করে থাকতে।
অথচ আতঙ্কিত হবার সত্যিই যদি কোন কারণ থাকতো তাহলে এই মানুষগুলোর হাসপাতালের ত্রিসীমানায় ভেড়ার কথা নয়।
বিবিসির কাছে একটি ছবি এসেছে রংপুরের ওই হাসপাতাল থেকে, যাতে দেখা যাচ্ছে, চারজন জীবানুনিরোধী পোশাক পরিহিত ডাক্তারের পাশে একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন যার সংক্রমণ ঠেকানোর কোন প্রস্তুতি আছে বলে চোখে পড়ছে না।
এর আগে, চীন থেকে ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের বিআরটিসির বাসে করে আশকোনার হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে দেখা যায় যে, ওই বাসগুলোতে করে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের দেখতে রাস্তার দুপাশে এবং হজ ক্যাম্পের বাইরে নাক চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উৎসুক মানুষেরা।
এসব ছবিই বলে দিচ্ছে, মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সংক্রমণ ঠেকাতে বা রোগ থেকে দূরে থাকতে কি করতে হবে সেই তথ্য তাদের কাছে নেই।
এই স্কুলগামী শিশুদের দেখা যাচ্ছে মাস্ক পরে রয়েছে। অথচ কাপড়ের তৈরি এই মাস্কটি জীবানু বা সংক্রমণ ঠেকানোর উপযোগী নয়। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি এই মাস্কটি শুধুমাত্র রাস্তার ধুলোবালি ঠেকাতে পরে থাকতে দেখা যায় অনেককে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘অযথা আতঙ্কিত না হতে’।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত চীন থেকে এসেছে এমন ৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে যাদের মধ্যে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার পর এদের কারো শরীরেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
এছাড়া চীন বা অন্য দেশের লোকজন আসার পর তাদেরকে স্ক্রিনিং করা হয় এবং তাদেরকে নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে রাখা হয়। তাই তাদের মধ্যে যদি করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যায় তাহলে দ্রুত আইসোলেশনে নেয়ার ব্যবস্থা করা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, “কেউ চীন থেকে ফিরলেই যে তিনি করোনা আক্রান্ত নন, কিংবা করোনা আক্রান্ত হলেও যে তিনি অস্পৃশ্য নন, সে বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে”।
আইইডিসিআর-এর পরামর্শ:
আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, নতুন করে আক্রান্তের হার আগের তুলনায় কমে এসেছে। তাই অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
সাধারণ ফ্লু হলে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয় সে ধরণের ব্যবস্থা নিলেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে, যেখানে সেখানে হাঁচি বা কাশি দেয়া যাবে না।
হাঁচি-কাশি দিতে রুমাল, টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
সঠিক তথ্য প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম এবং চিকিৎসক সবাইকেই নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
রোগির ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নচেৎ তার ও তার পরিবারের সামাজিকভাবে হেয় হবার আশঙ্কা তৈরি হবে।