আজ বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ শুরু হলো। ৫৫ বছর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর বেলা ১২টা ৪৬ মিনিটে চিলাহাটি স্টেশন থেকে ৩২টি পণ্যবাহী ওয়াগনের বহর নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। এ সময় রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন চিলাহাটি স্টেশনে বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকার সংকেত দিয়ে ট্রেনটির যাত্রা শুরু করান।
দুপুর দেড়টার দিকে রেল বহরটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পৌঁছে। সেখানে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিবি-বিএসএফ) মিষ্টি বিনিময়সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা সোয়া দুইটার দিকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে রেল বহরটি।
রেলপথে দুই বাংলার সংযোগ স্থাপনের ওই মন্দ্রেক্ষণ ঘিরে চিলাহাটি রেল স্টেশনসহ রেলবহরটিকে সাজানো হয় রঙ্গীন সাজে। স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় এক হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতার প্যাণ্ডেল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বড়পর্দায় দেখানো হয় প্যাণ্ডেলে।
অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন রেলাপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীন সরকার, নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. সামসুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ প্রমুখ।
৫৫ বছরের প্রতিক্ষীত রেলযোগাযোগর উদ্বোধন দেখতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চিলাহাটি স্টেশন এলাকার অনুষ্ঠানস্থলসহ আশপাশ এলাকায় জমায়েত হতে থাকে উৎসুক জনতা। অনেকে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে। তাদের সকলের আকাঙ্ক্ষা দীর্ঘ প্রতিক্ষিত রেল যোগাযোগের মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার। অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার জুড়ে রেলপথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে মাহেন্দ্রক্ষণটি উপভোগ করলেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
রেলওয়ে সূত্রমতে, ওই রেল বহরে ছিল ভারতীয় ৩২টি খালি ওয়াগন। আর রেলবহরটিকে টেনে নিয়ে যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন। এসব ওয়াগান হলদিবাড়ি রেলস্টেশনে রেখে পুণরায় সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসবে ইঞ্জিনটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরল ইসলাম সুজন বলেন, এ পথে আপাতত দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে পথটি দিয়ে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংক স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহীম বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ পথটি বন্ধ হয়। বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে বন্ধ থাকা রেল লিংক পুণরায় চালুর উদ্যোগ নেয়। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংকটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বর্তমান রেলপথমন্ত্রী এবং ভারতীয় হাইকমিশনার।
জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে ৫৫ বছর পর দুই দেশের রেল যোগাযোগের শুভ সূচনা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ এই পথে যাত্রিবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন হবে। যাত্রিবাহী ওই ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবে। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এ পথে আমাদের সেভেন সিস্টারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবো আমরা।
এবি/রাতদিন