মহামারি করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কোটি মানুষ। এসব মানুষের পাশে দাড়াতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও এগিয়ে এসেছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষরাও এসেছেন এগিয়ে। সহায়তার হাত বাড়ানোর বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেরপুরের ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা দুস্থদের মাঝে দান করেছেন তিনি। এমন মানবিক মানসিকতায় ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার জাতীয় এই দুর্যোগে অসহায় মানুষদের জন্য জুতা রং ও সেলাই করে জমানো ২০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন মিলন রবিদাস (৩৭)। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের এই ব্যক্তি পেশায় একজন মুচি।
সোমবার, ২৭ এপ্রিল বেলা আড়াইটার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন ভূঁইয়ার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন দলিত সম্প্রদায়ের মিলন।
বিস্মিত ইউএনও মামুন ভূঁইয়া জানান, আমার কাছে এটা অবাক করার মতো ঘটনা। একজন মুচি সারাদিন জুতা রং করে, সেলাই করে। সেই ঘাম ঝড়ানো টাকা করোনায় অসহায় মানুষদের জন্য সরকারি তহবিলে দেয়াটা নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা।
জানা গেছে, মিলন রবিদাসের নিজের থাকার মতো কোনো বসত ভিটে নেই। চাচার (জেঠা) জমিতে মা, স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার অভাব অনটনে ভরা সংসার চলে জুতা সেলাই করা সামান্য উপার্জনে।
মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ গেটের পাশে ছোট্ট একটা দোকান নিয়ে বসেন রবিদাস। সেখানে প্রতিদিন জুতা রং আর সেলাই করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলছে ছেলে মেয়ের পড়ালেখা সাথে সংসার দেখাশুনা। কয়েক বছর আগে বৃদ্ধ মা-আর স্ত্রীর চাপে অনেক কষ্টে দুই শতক জমি কিনেছেন রবিদাস। কিন্তু অর্থাভাবে সেই জমিতে এখনো বাড়িঘর বানাতে পারেন নি।
এ বিষয় মিলন রবিদাস বলেন, আমি পড়ালেখা করতে পারি নাই। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছি। বাবা মারা গেছে ২০ বছর আগে। এরপর থেকে বাপদাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি। সংসার চালানো যে কত কষ্টের তা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ও সমাজের অনেক বিত্তবানরা ত্রাণ সহায়তা দিয়ে দুর্যোগে লড়াই করছে। একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক যে অন্যের দানে চলে, সেও অসহায় মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তাই আমিও ঘর বানানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে জমানো টাকা সরকারের তহবিলে দিয়েছি।
মিলন বলেন, মানুষের পাশে মানুষ দাড়ালেই এই দুর্যোগ কেটে যাবে।