উত্তর জনপদের প্রখ্যাত ও জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া শিল্পী শমসের আলী প্রধানের মৃত্যুদিবস আজ। ২০০৪ সালের ২৭ নভেম্বর না ফেরার দেশে পারি জমান মুক্তিযোদ্ধা, কবি, গীতিকার ও সুরকার এই শিল্পী।
শমসের আলী প্রধানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী। অবিভক্ত বাংলায় কুচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের বুড়াবুড়ি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন তিনি।
বাবা সাহার উদ্দিন ও মা ছফুরোন নেছা। বাবা মায়ের ঘর আলোকিত করা এই গুণী শিল্পী ’৪৭এ দেশ ভাগের পর কৈশোর বয়সেই পাড়ি জমান বাংলাদেশে। স্থায়ী নিবাস গড়েন পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নে। সেখানেই কৈশোর, যৌবন, সংগীতের হাতে খড়ি ও প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠা।
ভাওয়াইয়া গানের প্রতি অনুরক্ত এই মানুষটি সারাজীবন ভাওয়াইয়ার সাধনা করে গেছেন। নিজ বাড়ীতে নিয়মিত আয়োজন করতেন ভাওয়াইয়া গানের আসর। নিজের খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে অনেককেই শিখিয়েছেন ভাওয়াইয়া গান।
১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ নেন তিনি। ক্যাম্পে ক্যাম্পে গান গেয়ে উজ্জীবিত করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে। মুক্তিযদ্ধে এই অসামান্য অবদানের কারনে তাঁকে সরকারীভাবে ‘শব্দসৈনিক’ উপাধি দেয়া হয়।
শুধুমাত্র ভাওয়াইয়া শিল্পীই ছিলেন না তিনি। ছিলেন বিশিষ্ট গীতিকারও। জীবদ্দশায় দুই হাজারেরও অধিক গান লিখেছেন। সুর করেছেন সহস্রাধিক গানে। ছিলেন রংপুর বেতারের নিয়মিত শিল্পী।
তাঁর গাওয়া অনেকগুলো ভাওয়াইয়া গান জনপ্রিয়তায় ছিলো আকাশছোঁয়া। এগুলোর মধ্যে, ‘কারবা বাড়ির চিতিয়া বিলাই…’, মন করে মোর উড়াও বাইরাও..’ এরকম অনেক গান দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বজনীন জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, তার রচিত গানের কোন পান্ডুলিপি এখন পর্যন্ত সংকলিত হয়নি। শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নেয়া হয়নি কোনপ্রকার উদ্যোগ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে একদিন মহান এই মানুষটির মতো তার অমর সৃষ্টিও হারিয়ে যাবে কালের গর্তে।