সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়াচ্ছে সরকার। যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন না বাড়ানোয় হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।
বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে বেতন পান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন তাদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হচ্ছে। আর সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেড থেকে উন্নীত হবেন ১২তম গ্রেডে। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর জন্য গত ৩১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সম্মানজনক গ্রেডে নেয়া। সেটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি নিয়ে সরকার কাজ করছে।’
দীর্ঘদিন ধরেই বেতন স্কেল ১০তম গ্রেডে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রধান শিক্ষকরা। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদার ঘোষণা দিলেও মন্ত্রণালয় থেকে বেতন দেয়া হচ্ছিলো ১১তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্যসব দপ্তরের কর্মকর্তারা বেতন পান দশম গ্রেডে। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ ছিলেন প্রধান শিক্ষকরা।
বেতন নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে সহকারী শিক্ষকদের ভেতরেও। বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘পদ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের নিচের ধাপে সহকারী শিক্ষকদের অবস্থান। অথচ প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে, সহকারী শিক্ষকদের ১৪তম গ্রেডে। এটি বৈষম্য। তাই আমাদের দাবি, প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০তম গ্রেডে নিয়ে আমাদের বেতন গ্রেড ১১তম ধাপে নির্ধারণ করা হোক।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ৬ বছর ধরে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়ে আসছি। অথচ দাবি পূরণ হচ্ছে না।’ এটিকে সারাদেশের লাখ লাখ প্রাথমিক শিক্ষকের প্রাণের দাবি হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে ১২,৫০০ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে ১০,২০০ টাকা পেয়ে থাকেন। ১৬ বছর চাকরির পর একজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের বেতনে ব্যবধান ভাতাসহ প্রায় ২০ হাজার টাকায় দাঁড়াবে।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয়েই বেতন পেতেন ১৩৫ টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের পর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মাঝে বেতনের কোনো ব্যবধান ছিল না। প্রধান শিক্ষকরা কার্যভার ভাতা হিসেবে ১০ টাকা বেশি পেতেন।
তবে ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট বেতন আপগ্রেডের নামে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে ৩,৫০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ১৫তম গ্রেডে ৩,১০০ টাকা বেতন নির্ধারিত হয়। এ সময় দুই ধাপ বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি হয় এবং বেতনের ব্যবধান হয় ৪০০ টাকা।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। সেসময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদাসহ বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয় ১১তম গ্রেডে ৬,৪০০ টাকা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল নির্ধারণ করা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ১৪তম গ্রেডে ৫,২০০ টাকা। বেতন গ্রেডের পার্থক্য হয় তিন ধাপ। তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হলেও তৃতীয় শ্রেণিতেই থেকে যান সহকারী শিক্ষকেরা। আর বেতন আপগ্রেডের সময় মূল বেতনের ব্যবধান হয় ১,২০০ টাকা এবং ২০১৫ সালের অষ্টম জাতীয় পে স্কেলে সে ব্যবধান বেড়ে ২,৩০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।