ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে যাচ্ছে সরকার। রোববার সকালে ঢাকায় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ভার্চ্যুয়ালি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং ভুটানের অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রী লোকনাথ শর্মা নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে মোট বাণিজ্য ছিল ১২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ শূন্য দশমিক ৬১ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে একই সময়ে আমদানি করে ১২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্য ৫৭ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এ সময় বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৭ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। একই সময়ে ভুটান থেকে আমদানি হয় ৪৯ দশমিক শূন্য ৯ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।
তিনি বলেন, ভুটান থেকে প্রধানত বোল্ডার স্টোন আমদানি করা হয়, যা বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য (আমদানি ও রপ্তানি) ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ভুটানের দ্বিতীয় রপ্তানি বাজার। বাংলাদেশ-ভুটানের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ফলে বর্তমানে প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা হ্রাস পাবে। তাই সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তিসমূহ সময়োপযোগী করতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। আরো ১১টি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যে কোনো সময় এদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন হবে।
টিপু মুনশি বলেন, এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপাক্ষিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে সামগ্রিকভাবে ১০০টি পণ্য এবং ভুটান বাংলাদেশে ৩৪টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ থেকে ভুটানে গার্মেন্টস, প্লাস্টিক, পাট ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে নজর দেবে সরকার।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। স্বীকৃতি দানের পর থেকে সুদীর্ঘ ৫০ বছর যাবত দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে। বাংলাদেশ মুজিব শতবর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কে একটি নতুন মাইলফলক তৈরি হতে যাচ্ছে।
এনএ/রাতদিন