বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রঃ বিকশিত হবার একটি সপ্রাণ পৃথিবী

১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৮। ঢাকা কলেজের পেছনে শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের (এখনকার নায়েম) ছোট্ট মিলনায়তনটিতে শুরু হল একটি ছোট্ট পাঠচক্র। সভ্যসংখ্যা মাত্র পনেরো। ঠিক হল প্রতি সপ্তাহে তারা প্রত্যেকে একটি নির্ধারিত বই এখান থেকে বাড়ি নিয়ে পড়ে পরের সপ্তাহের এই দিনে এখানে এসে মিলিত হবে এক তপ্ত মুখর অন্তরঙ্গ আলোচনায়।

বইগুলোর ভেতর লেখকদের যে আত্মার আলো জ্বলছে তার সঙ্গে নিজেদের বহুমুখী বোধের আলো মিশিয়ে তারা জেগে উঠবে উচ্চতর মানবিক সমৃদ্ধির দিকে। 

পাঁচ বছর পর এই পাঠচক্রের আশাতীত সাফল্য দেখে চিন্তা এল জীবন-বোধের বিকাশে এ যখন এতটাই ফলপ্রসূ তখন কেন নয় দেশের প্রতিটি স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সবখানে এমনই ধরনের চক্র–এমনি হাজার হাজার পাঠচক্রের মাতাল আনন্দে দেশের কিশোর তরুণ থেকে প্রতিটি আলোক প্রত্যাশী মানুষকে জড়িয়ে ফেলা? বই পড়ার পাশাপাশি নানামুখী সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে তাদের উৎকর্ষ ও পরিশীলন? মেধা ও হৃদয়ের উচ্চতর বিকাশ?

১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে পনেরো জন সদস্য নিয়ে যে পাঠচক্রটি শুরু হয়েছিল আজ সারা দেশে এর সদস্য সংখ্যা পনেরো লক্ষ। এর কর্মকান্ড ও অবয়ব এখন বিপুল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর...

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎ-বাঁধা, ছক-কাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সপ্রাণ সজীব পরিবেশ- জ্ঞান ও জীবনসংগ্রামের ভেতর দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী।

এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিবান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যাঁরা জ্ঞানার্থী, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক- ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’ তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত একটি অঙ্গন।

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে, গ্রিসে, পেরিক্লিসের আমলে, এথেন্সের যুবকদের আঠারো বছরে পদার্পণ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একটি শপথবাক্য উচ্চারণ করতে হত। সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হত, ‘আমি সারাজীবনে এমন কিছু করে যাব যাতে জন্মের সময় যে-এথেন্সকে আমি পেয়েছিলাম মৃত্যুর সময় তার চেয়ে উন্নততর এথেন্সকে পৃথিবীর বুকে রেখে যেতে পারি।’ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেষ্টাও তেমনি এক উন্নততর বাংলাদেশের জন্য।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ আর শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান নয়। এটি আজ একটি দেশব্যাপী আন্দোলন। আলোকিত জাতীয় চিত্তের একটি বিনীত নিশ্চয়তা। মানবজ্ঞানের সামগ্রিক চর্চা এবং অনুশীলনের পাশাপাশি হৃদয়ের উৎকর্ষ ও জীবনের বহুবিচিত্র কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উচ্চতর শক্তি ও মনুষ্যত্বে বিকশিত হবার একটি সপ্রাণ পৃথিবী।

সুত্রঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ওয়েবসাইট

মতামত দিন