মুড়ি। শীত হোক আর গ্রীষ্ম। কিংবা বর্ষা। রমজান বা পহেলা বৈশাখ। বাঙালি মুড়ি খেতে ভালবাসেন না-বছর জুড়ে এমন সময় হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তবে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়াবাসী এ ক্ষেত্রে হয়তো একটু এগিয়ে। মুড়ি খাওয়ার ব্যাপারে তাদের সুনাম চিরকালের। এজন্য নিন্দুকের খোঁচাও শুনতে হয় কখনও কখনও।
এরপরও তারা ঘটা করে মুড়ি খাওয়ার আয়োজন করেন প্রতিবছর। এ নিয়েই অনুষ্ঠিত হয় মেলা। নানা বয়সী হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন সেই মেলায়। আসার সময় বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন মুড়ি।
এরপর শীতের রোদ গায়ে মেখে নদীর চরে সকলে এক সঙ্গে বসে মুড়ি খান। অবাক লাগলেও কয়েকশো বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার দ্বারকেশর নদীর চরে।
ওই ধারাবাহিকতায় শনিবার, ১৯ জানুয়ারিও ‘মুড়ি মেলায়’ অংশ নেন হাজারো মানুষ। বাড়ি থেকে মুড়ি এনে চপ, সিঙ্গারা, পাকোড়া, চানাচুর, শসা, পেঁয়াজ, টমেটো, কাঁচা মরিচ দিয়ে দলবেধে একসঙ্গে বসে চলেছে মুড়ি খাওয়া। তার আগে নদী তীরের মাটি খুঁড়ে পানি বের করে তা ছিটানো হয় মুড়িতে।
ভারতীয় গণমাধ্যমকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দ্বারকেশর নদী তীরে ‘সঞ্জীবনী মাতা’ আশ্রম বহু পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই এই আশ্রমে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ১ মাঘ থেকে হরিনাম সংকীর্তন শুরু হয়। যা চলে ৪ মাঘ পর্যন্ত।
এক সময় এই এলাকা ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। তখন হরিনাম সংকীর্তনে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে অংশ নিতেন। জঙ্গলে থাকা হিংস্র জীবজন্তুর ভয়ে মানুষ আর রাতে বাড়ি ফিরতে পারতেন না। ফলে তারা ওই মন্দিরেই রাত্রিবাস করে সকালে দ্বারকেশর নদীর জলে মুড়ি ভিজিয়ে খেয়ে যে যার মতো বাড়ি ফিরতেন। সেই থেকেই এই মুড়ি মেলার সূচনা।
এদিন মুড়ি মেলায় আসা মৌসুমি কাইত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সারা বছর যাদের সঙ্গে দেখা হয়না তাদের সাথে দেখা হয়। আর সবাই একসঙ্গে বসে মুড়ি খাওয়ার এই আনন্দ কোথাও মিলবে না’।
মেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ মোদক বলেন, ‘গ্রামবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় এই মেলা চলছে। সকালে বাড়ি থেকে সঙ্গে করে আনা মুড়ি খাওয়া হয়৷ তারপর দুপুরে সবাই একসঙ্গে খিচুড়ি খেয়ে বাড়ি ফিরে যান’৷
এইচএ/২১.০১.১০