ভাদ্র মাস আসতে না আসতেই বাজারে এসেছে তাল। তালের সুবাসে মৌ মৌ করছে পুরো সিটি, এর আশেপাশের বিভিন্ন হাট-বাজার।
ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে তালের পিঠা। অনেকে পাকা তালের মিষ্টি ঘন রস কাঁচাই খান, আবার অনেকে সিদ্ধ করে তা দিয়ে পিঠা বা সুস্বাদু খাবার বানিয়ে খান। এ ছাড়া তালের বীজের শাঁস অনেকের প্রিয়।
দুই তিন মাস আগে বাজারে কাঁচা তালের রসালো শাঁস রসনা মিটিয়েছে। এখন শহর-গ্রাম সবখানে তালের রস দিয়ে নানা রকমের পিঠা, পায়েস, পাকোয়ান, তালমিছরি, তাল মাখনা, তালের বড়াসহ রকমারি খাবার তৈরি হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়তদাররা রংপুরে নিয়ে এসেছেন পাকা তাল। একেকটি শাস ১০-১৫ টাকা দরে বিক্রী করছে হকাররা।
কাচারী বাজার এলাকায় ভ্যানে করে তাল বিক্রী করছে আশরাফুল জানায় তালের শাস একটা তাল ৫ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আশরাফুলের মতো তালের পসরা ঝুড়িতে সাজিয়ে রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করছেন অনেক হকার।
নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ায় মোড়ে ভ্যানে করে তাল বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, প্রতিদিন ১শ তাল পাইকারী কিনেন ৫শ থেকে ৬শ টাকা। শাস বের করে ১৫শ ১৬শ টাকা বিক্রী হয়।
রংপুর মহানগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ায় আতরদার সেলিম সরকার জানান, সপ্তাহখানেক থেকে শাস খাওয়া তাল আসা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগই আসছে নাটোর থেকে। এ ছাড়া যশোর, নওগাঁ ও নড়াইল এলাকা থেকেও তাল আসে। তবে গুণগত মানের দিক থেকে যশোর তালের সুনাম আছে। এখন দৈনিক দুয়েক ট্রাক তাল বাজারে আসছে। প্রতি ট্রাকে আকারভেদে দশ থেকে বার হাজার পর্যন্ত তাল ধরে । প্রতি ট্রাক তালের ক্রয়মূল্য ১২-১৪ হাজার টাকা, পরিবহন ও আনলোড খরচ ৪-৫ হাজার টাকা মিলিয়ে ট্রাকপ্রতি মোট ১৭-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বাজারে চাহিদা থাকায় লাভ মোটামুটি থাকে বলে জানান তিনি।
শুধু তালের শাসই নয়, তালপাতার রয়েছে বিভিন্ন রকম ব্যবহার । হাত পাখার কথা তো বলাই বাহুল্য। এ দিয়ে টুপি, ঝুড়ি, চাটাই, মাদুর, বেড়াসহ নানা খেলনা তৈরি হয়। এর কাঠও দারুণ শক্ত এবং আঁশযুক্ত। সহজে পঁচে না বা নষ্ট হয় না। ছোট ডিঙি নৌকা তো হয়ই, ছাতির বাঁট, লাঠি, বাক্স, পাপোশ, কয়ার ইত্যাদি জিনিসও তৈরি হয় ওই তালগাছ থেকে।
গ্রামের বহু পুকুরের ঘাট তৈরি করা হয় তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে। তাল গাছ চিরে যে নৌযান বানানো হয় তার নাম ডোঙা। গ্রামীন জনপদের বর্ষাকালীন এক উপকারী নৌযান এটি। শাপলা তুলতে, মাছ ধরতে, পন্য বা অন্যান্য মালামাল পরিবহনে এটা দারুন দরকারী।
আর তালগাছে বাবুই পাখির সারবাধা বাসার নৈসর্গিক সৌন্দর্য তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।