আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখনও সুযোগ খুঁজছে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন বিরোধী অপশক্তি এখনও চারপাশে আছে। তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারছে না। তারা আসলে শান্তি ও স্বস্তির বাংলাদেশ চায় না। যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে, যারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চক্রান্ত করেছে, তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। স্বাধীনতা নিরাপদ নয়।
ওবায়দুল কাদের আজ সোমবার, ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন। ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা কোনো খুনিকে ইনডেমনিটি আইন করে বাঁচাননি। খুনিকে জায়েজ করেননি। যাদের ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল, তারা এখন গুম-খুনের কথা বলে। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল। তারা তখন ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করে। আজ তারা বলে দেশে বিচার নেই, বিচারতো দূরের কথা, ২১ বছর আমরা বিচার চাইতেই পারিনি।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট মামলার বিচার ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তারা জজ মিয়ার নাটক সাজিয়েছিল। এদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি বিএনপিই করে। তারা অপারেশন ক্লিন হার্ট পরিচালনা করেছে। ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর হতে ২০০৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৭ জনকে হত্যা করা হয়েছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, উন্নয়ন বিরোধী অপশক্তি তলে তলে তৎপর। তারা দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চায়। সতর্কতার পাশাপাশি উন্নয়নের অগ্রযাত্র অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
কাদের কলেন, ২০০৫ সালের এই দিনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) সারাদেশে একযোগে দেশের ৬৩ জেলায় ৫শ স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় ২জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়।
তিনি বলেন, এই সিরিজ বোমা হামলার প্রস্তুতি একদিনে হয়নি। তৎকালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে জঙ্গিরা একদিনে একই সময়ে এই হামলা করতে পারতো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা করা হয়। এসব ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনার মাস্টার মাইন্ড বিএনপি। এটি অভিন্ন ষড়যন্ত্রেরও অংশ। এটি ছিল জঙ্গি গোষ্ঠির শক্তি প্রদর্শন।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, বিএনপি এদেশে জঙ্গিবাদ লালন পালন করে ক্যান্সারে পরিণত করেছে। বামপন্থী দমনের নামে জেএমবি বাগমারাসহ রাজশাহীতে হত্যাকাণ্ড চালায়। বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজশাহীতে প্রকাশ্যে মিছিল করা হয়। বিএনপি ছিল নিরব প্রশয়দাতা। ৩ মাসের মাথায় জেএমবির বোমা হামলায় ঝালকাঠিতে দুই বিচারক প্রাণ হারান। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার জন্য এসব করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা আর কোনো ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট ও ১৭ আগস্টের মতো ঘটনা দেখতে চাই না। চাই না রমনার বটমূলের মতো নৃশংস হত্যাকাণ্ড। পচাত্তরের ১৫ আগস্টের মতো নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর কোনো দেশে হয়নি। বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাদের বলেন, দেশের টানে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকল বাধা অতিক্রম করে ১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আছেন বলেই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। জঙ্গিবাদ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের পুনবার্সন করে থেমে থাকেনি। ইনডেমনিটি জারি করে বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমান এবং অশুভ চক্র পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বিচার বন্ধের বিধান যুক্ত করে লাখ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত সংবিধানকে কলঙ্কিত করেন।
এবি/রাতদিন