‘ওম’ ছড়াতে গভীর রাতে, কর্তারা সব দ্বারে দ্বারে!

0
পঞ্চগড় থেকে মো. লুৎফর রহমানের পাঠানো প্রতিবেদন :

প্রায় ৯টা। শীতের রাত, বাইরে লোকজন তেমন নেই। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বের হলো গাড়ি, ছুটে চললো। গন্তব্য জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের দেবীগঞ্জ উপজেলার দিকে। উপজেলা সদর নয়। গাড়ি যাবে আরও ভেতরের গ্রামে, ‘কোট ভাজনি’। যার পরিচয় একসময় ছিল ‘ছিটমহল’ হিসেবে। মাঝপথে দেবীগঞ্জে যোগ দেয় আরেকটি গাড়ি।


ছবি : রাতদিন.নিউজ

ভাঙাচোড়া রাস্তা পেরিয়ে একমসয় গাড়ি দুটি পৌঁছে যায় সেখানকার বালাসুতি গুচ্ছগ্রামে। শহর থেকে আসা গাড়ি থেকে নামলেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সুবল চাকমা। সাথে আরও দু’জন।

অপর গাড়িটি থেকে ততক্ষণে নেমে পড়েছেন দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পরিমল দে সরকার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। সুবল চাকমার গাড়ি থেকে নামানো হলো কম্বলের বান্ডিল। দলে ছিলাম আমিও।

রাত তখন সাড়ে ১০টা। গুচ্ছগ্রামে গিয়ে সেখানকার বাসীন্দাদের ডেকে তুললেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা। এরপর প্রতিটি পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হলো দুটি করে কম্বল। অভাবি শিশুরা পেল নতুন সোয়েটার।

ছবি : রাতদিন.নিউজ

সেখান থেকে পাশের গ্রাম বোদাপাড়ায়। এরপর গাজোকাটি বাজার, উপজেলা সদরের জেলে পাড়া যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাছুয়াপাড়া নামে। একইভাবে এসব এলাকার শীতার্তরা পেল কম্বল-সোয়েটার। একসময় রাত গভীর হয়, কর্মকর্তারা ‘ওম’ ছড়িয়ে ঘরে ফেরেন।

বলছি শনিবার, ৫ জানুয়ারি রাতের কথা। আর শুধু সুবল চাকমা নন, তাঁর মতো আরও ৯ কর্মকর্তা একইভাবে গভীর রাত পর্যন্ত দুঃস্থ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন সরকারি শীতবস্ত্র। জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে। বাদ যায়নি রাস্তায় দেখা হওয়া কোনো ভ্যানগাড়ি-ইজিবাইক চালক বা ছোট্ট কোনো বাজারের দোকানী। এভাবে ওইরাতে প্রায় সাড়ে চার হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে পঞ্চগড়ে।

দুটি কম্বল পেয়ে গাজোকাটি গ্রামের ময়জুদ্দিনের অনুভূতি, ‘অফিসাররা গরীব মানুষের বাড়ি বাড়ি এসে শীতের কাপড় দেয় এটা জীবনে প্রথম দেখলাম’।

ছবি : রাতদিন.নিউজ

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন দরিদ্র শীতার্তদের ঘরে ঘরে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে পৃথক ১০টি টিম করেন। এরপর তাদের শীতবস্ত্র দিয়ে পাঠিয়ে দেন প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে।

এর আগে সন্ধ্যার দিকে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন।

দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পরিমল দে সরকার রাতদিন.নিউজকে বলেন, ‘কনকনে শীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণকে আমরা সাধুবাদ জানাই’।

পঞ্চগড়ে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার কম্বল-সোয়েটার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন।


‘কনকনে শীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণকে আমরা সাধুবাদ জানাই’

এইচএ/০৭.০১.১৯

মতামত দিন