দিনমজুর মায়ের ৬ কন্যার সংসারে, জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে চায় অদম্য রিফা

বাবা নেই । মায়ের দিন মজুরী ও বোনের টিউশনির টাকায় চলে সংসার । পরিবারে অভাব-অনাটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী । এর পরও টিউশনি করে লেখা পড়া চালিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌসী রিফা । সীমাহীন দারিদ্র, শতকষ্ট কে পিছনে ফেলে অলংঘনীয় সব বাধা পেরিয়ে এস সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ ( গোল্ডেন এ+) পেয়েছে রিফা । পরীক্ষা দিয়েছিলো লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যাল থেকে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতেও জিপেএ ৫ পেয়েছিলো সে।

জান্নাতুল ফেরদৌসী রিফার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড জমগ্রামে । তার বাবা মো. আজিজার রহমান প্রায় ৮ বছর অসুস্থ থাকার পর ২০১৭ সালে মারা যান। মা মোছা: আশরাফোন নেছা গৃহিণি।

মায়ের দিনমজুরী ও দুই বোনের টিউশনির সামান্য আয়ে চলে তাদের সংসার ও পড়া লেখা । ৬ মেয়ের মধ্যে রিফা চতুর্থ । বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় বোন আল্পনা আক্তার মাস্টার্সে পড়েন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। তৃতীয় বোন সালমা আক্তার পড়েন করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। পঞ্চম বোন মোছা: রাজিয়া সুলতানা ঐশী পড়ে বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেও পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টফুল বৃত্তি পেয়েছে। সবার ছোট বোন মোছা: হুমায়রা মেহজাবিন রিংকি পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে ।

জান্নাতুল ফেরদৌসী রিফা বলেন, ‘আমার সকল কষ্ট সার্থক হয়েছে। আমি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৌশলী হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর...

মা আশরাফোন নেছা বলেন, আমার মেয়ে রিফা মাঝে মাঝে অনাহারে স্কুল যেতো। পরিবারে লোকজন বেশি এর ফলে আমার দিনমজুরীর সামাণ্য আয় দিয়ে সংসার চলে না । অভাবের কারনে রিফাসহ আরো দুই মেয়ে টিউশনি করে । মেয়েদের টিউশনির টাকায় তাদের পড়া লেখা ও কোন রকমে সংসার চলছে। সে প্রত্যেক ক্লাসে ভালো ফলাফল করেছে। হাই স্কুলে লেখা পড়া করা অবস্থায় স্থানীয় সাংসদ মোতাহার হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে কম্পিউটার প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন মাসুদ তার পড়া লেখার সহযোগিতা করেছিল। আমরা গরিব মানুষ । আমাদের তো আর সামর্থ নেই মেয়েকে কলেজে পড়াতে। এখন কোন দানশীল ব্যক্তি যদি তার লেখা পড়ার খরচ বহন করে । তাহলে সে পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারবে।’

বাউরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আশাদুল হক জানালেন, রিফার বাবার জমিজমা কিছু নেই । তার পরও তার মেয়ে অনেক কষ্টের মাঝে সব ক্লাসে ভাল ফলাফল করেছে। তিনিও মেয়েটির প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধাণ শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌসী রিফা মেয়েটি খুবই মেধাবী ও অমায়িক । দারিদ্রের কারনে স্কুলে আমরা তাঁকে লেখাপড়ার উপকরণ ও ফ্রি পড়ার বন্দ্রোবস্ত করেছি। তার মা খুবই গরিব।

শিক্ষাণুরাগী কেউ তার পড়াশুনায় সহযোগিতা করলে, সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে । ভবিষতে ভাল কিছু করবে-এমন প্রত্যাশাই ঝরে পড়লো প্রধান শিক্ষকের মুখেও।

জেএম/রাতদিন