রংপুরের বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারটিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একত্রিশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত বলে দাবি স্থানীয়দের। এতে এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
গত বুধবার, ১ জুলাই হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তথ্যবিদ নূর আলমের বিরুদ্ধে গোপনে গাছের চারা পাচার ও বিক্রির অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন হটিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. আফতাব হোসেন।
জানা গেছে, গত ১ জুলাই উপ-পরিচালকের অনুপস্থিতির সুযোগে উদ্যান তথ্যবিদ নূর আলম হর্টিকালচার থেকে গোপনে ৪৫০টি গাছের চারা গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সে লক্ষ্যে তার ভাই হাফিজুল ইসলামের মাধ্যমে লিচু, আম, মালটা ও লটকনের বিভিন্ন জাতের ১৮ হাজার টাকা মূল্যের গাছের চারা পাচার করেন।
এসব চারা গাছ নিয়ে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে গঙ্গাচড়া মৌলভীবাজার নামক স্থানে স্থানীয় জনতা চারা বহনকারী ওই শ্যালো মেশিন চালিত ভ্যানটি আটক করে। এসময় হাফিজুলের কাছ থেকে চারা ক্রয়ের রশিদ (রিসিভ) কপি দেখতে চাইলে সে দ্রæত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
পরে তাকে স্থানীয়রা আটক করে হর্টিকালচার সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে সে ও ভ্যানচালক অকপটে স্বীকার করে উদ্যান তথ্যবিদ নূর আলম বিনা রশিদে কোনো টাকা ছাড়াই এসব গাছের চারা দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশ-বাহিরে কোনো বিধিনিষেধ না থাকার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজোগে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা বলছেন, শুধু হর্টিকালচার সেন্টার থেকে গাছের চারা পাচার ও গোপনে বিক্রির ঘটনা ঘটছে না। সঙ্গে কয়েকজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিধি লঙ্ঘন করে চাকরিতে বহাল থাকা অবস্থায় সেন্টারের আশপাশে ব্যক্তিগত নার্সারি গড়ে তুলেছেন। তারা বেশির ভাগ সময়ই অফিসের দায়িত্ব পালন না করে বাহিরের নার্সারিতে চারা বিক্রিতে ব্যস্ত থাকেন।
স্থানীয় নার্সারি মালিকদের দাবি, হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক, আজিজার রহমান, তৌহিদুল ইসলাম ও আব্দুল লতিফ মিলে বুড়িরহাটের চব্বিশ হাজারিতে ও গঙ্গাড়ার চেংমাড়িতে নার্সারি গড়েছেন। এসব নার্সারির কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দিনের পর দিন চাকরির দায়িত্ব পালন না করে ব্যক্তিগত নার্সারির ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা।
এসব অভিযোগের ব্যপারে মুখ খুলতে নারাজ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা। তবে রশিদ ছাড়া গাছের চারা বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন সেখানকার উদ্যান তথ্যবিদ নূর আলম। তিনি বলেন, এটা আমার মিসটেক (ভুল)। আমি ওই সময়ে খেতে বসেছিলাম, দ্রুত চারাগুলো ডেলিভারি দিতে গিয়ে রশিদ দেয়া হয়নি। পরে ১৮ হাজার টাকার রশিদ করেছি। তারপরও সবাই আমাকে সন্দেহ করছে।
নূর আলম তিন মাসে আগে কক্সবাজারে থেকে বদলি হয়ে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায়। নিজের ছোট ভাইকে নার্সারি তৈরির জন্য সাড়ে চারশ গাছের চারা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
এদিকে হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। নিয়ম অনিয়ম-দুর্নীতির কথা শুনেছি। অনেকে লিখিত অভিযোগও করেছেন। তবে রশিদ ছাড়া গাছের চারা বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর সকল স্টাফদের নিয়ে মিটিং করেছি। আর এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি।
জেএম/রাতদিন