গানকে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেই দেখা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা জানালেন শুধু বিনোদন নয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ভুমিকা রাখে গান। গান রোগীর অসুখও সারিয়ে তুলতে পারে!
অসম্ভব মনে করছেন? এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনটি পড়ুন। আপনার ভ্রান্ত ধারনা একদম কেটে যাবে।
গবেষকরা বলছেন, মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রন করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশটি। পছন্দের সুর বা গান সোজা গিয়ে আঘাত হানে মস্তিষ্কের এই হাইপোথ্যালামাস অংশে। ফলে পছন্দের সুর বা গানে তা উদ্দীপিত হয় এবং রোগী অপেক্ষাকৃত সুস্থ্য বোধ করেন। আস্তে আস্তে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন রোগী। এনআইবিপি নামের মনিটর লাগিয়ে এই উদ্দীপনা পরিমাপ করা যায়।
প্রিয় গান বা সুর রোগিকে শোনালে রোগী এটা শুনে তাঁর, কষ্ট হতাশা বেদনা-ব্যাথা ভুলে যেতে পারেন- এমনটাই দাবি করেছেন গবেষকরা। তাঁরা বলছেন, গান অনিদ্রা রোগীর চোখে নিয়ে আসবে ঘুম। অশান্ত মনকে শান্ত করবে। এমনকি প্রবল ব্যথায় বা টেনশনে যে হৃদস্পন্দন, নাড়ির গতি ও রক্তচাপ বেড়ে থাকে, তার সব কমতে শুরু করে গভীর মনোযোগে গান শুনলে।
ধরুন, আপনি মারাত্মক ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন। কেউ আপনাকে গান শোনার পরামর্শ দিলেন। আপনি নিশ্চয়ই তাকে পাগল বলবেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা। মারাত্মক ব্যাথায় আক্রান্ত অবস্থায় যদি আপনি একবার গানের সুরে ডুবে যেতে পারেন তাহলে আপনার ব্যাথা কমে যাবে প্রায় ৭৫ ভাগ।
কেননা এতে মন ভালো করার হরমোনরা, ব্যাথার জন্য জন্য দায়ী ‘স্ট্রেস হরমোনকে’ সরিয়ে দেবে। ফলে কমে যাবে উচ্চ রক্তচাপ। কেটে যাবে অনিদ্রা ও দীর্ঘমেয়াদী অসুখের প্রকোপ।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমান করা গেছে, হসপিটাল সিকনেসের প্রকোপ কমাতে মিউজিক থেরাপী বেশ কার্যকরী। সেরিব্রাল পাল্সি, অটিজম ও পক্ষাঘাতের শুরুতে অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করলে ভাল ফল হয়৷
বাতের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও গান শোনা বেশ উপকারী৷ এমনকী, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কষ্টকর অসুখেও এর ভূমিকা আছে৷ নিয়মিত মিউজিক থেরাপি নিলে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো বাড়িতে তার প্রয়োগ করলে ক্রনিক ব্যথার রোগীরাও সুস্থ হয়ে ওঠেন ধীরে ধীরে৷
গান নিয়ে গবেষণা বা বিশ্লেষনের দরকার নেই। একমনে পছন্দের গান বা সুর শুধু শুনে যান। একটানা শুনতে পারলে ভালো। না হলেও দিনে কমপক্ষে চারবার ১৫ মিনিট করে শুনলেই হবে। কাজের ফাঁকে, ঘুমানোর আগে, গাড়ীতে, ব্যায়ামের সময়, অবসরে নিয়ম করে গান শুনুন। সুস্থ্য থাকুন আজীবন।