হ্যামিলটন মাসাকাদজা যখন ব্যাট হাতে শেষবার মাঠে ঢুকছিলেন দুই দলই তাকে ‘গার্ড অব অনার’ জানালো।উইকেটে গিয়ে শেষবারের মতো গার্ড নিয়েই উত্তাল হয়ে উঠল হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ব্যাট। ক্যারিয়ার জুড়ে অনেক সময়ই প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির টানাপোড়েন ছিল যার পারফরম্যান্সে, শেষ ম্যাচ রাঙালেন তিনি নিজেকেই যেন বিদায়ী উপহার দিয়ে। থামল টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের অপরাজেয় যাত্রা।
ত্রিদেশীয় সিরিজের নিয়ম রক্ষার ম্যাচটি একটু বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল মাসাকাদজার বিদায়ী ম্যাচ বলেই। ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেছেন তিনি ৪২ বলে ৭১ রানের দারুণ ইনিংস। আফগানিস্তানকে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেটে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নবমবারের দেখায় এই প্রথম জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে।
অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড টানা ১২ ম্যাচ জয়ের পর হারল আফগানিস্তান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার আফগানদের ১৫৫ রানে থামিয়ে জিম্বাবুয়ে জিতেছে ৩ বল বাকি রেখে।
ম্যাচ শেষের ফল অনুমান করা যায়নি শুরুর ১০ ওভারে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও হজরতউল্লাহ জাজাই আফগানিস্তানকে এনে দিয়েছিলেন দুর্দান্ত শুরু। ৫৮ বলে ৮৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুজন।
কিন্তু পরের ১০ ওভারে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ের বোলাররা। ইনিংসের বাকি সব জুটি মিলিয়ে আফগানরা করতে পারে কেবল ৬৫ বলে ৭২ রান।
ইনিংসের মাঝামাঝি দারুণ বল করেছেন মুতুমবোদজি। শেষ দিকে অভিজ্ঞ ক্রিস এমপোফু উইকেট নিয়েছেন নিয়মিত। আফগানরা তাই থমকে যায় দেড়শ পেরিয়েই।
৩০ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেট নিয়েছেন এমপোফু।
রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ের সূচনাও হয় উড়ন্ত। ইনিংসের প্রথম বলেই মুজিব উর রহমানকে বাউন্ডারি মারেন ব্রেন্ডন টেইলর। পরের বলেই ছক্কা! আরেক পাশে মাসাকাদজার ব্যাটও ছুটতে থাকে।
১৯ রানে টেইলরের বিদায়ে ভাঙে ৫ ওভারে ৪০ রানের জুটি। কিন্তু মাসাকাদজাকে থামাতে পারেনি আফগান বোলাররা। রেজিস চাকাভার সঙ্গে দলকে এগিয়ে নেন জয়ের দিকে।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ বলে আসে ৭০ রান। তাতে চাকাভার অবদান ছিল ১৮ বলে ১৭ রান, মাসাকাদজা করেন ২৯ বলে ৫০!
রোমাঞ্চের পেছনে ছুটেই শেষ হয় মাসাকাদজার শেষ ইনিংস। ৪টি চার ও ৫ ছক্কার ইনিংসে বিদায় নেন আরেকটি ছক্কার প্রচেষ্টায়। ছুটে গিয়ে তার পিঠ চাপড়ে দেন প্রতিপক্ষ ক্রিকেটাররাও।
সেখান থেকে আর জিম্বাবুয়েকে পা হড়কাতে দেননি চাকাভা-উইলিয়ামসরা। ৩২ বলে ৩৯ রান করে চাকাভা আউট হয়েছেন দলের জয়ের কাছে গিয়ে। মাসাকাদজার কাছ থেকে নেতৃত্ব পাচ্ছেন যিনি, সেই শন উইলিয়ামস ফিরেছেন দলের জয় সঙ্গে নিয়ে।
ম্যাচ শেষেও সবার আগ্রহের কেন্দ্রে দেখা গেল মাসাকাদজাকে। তার মুখে তখন চওড়া হাসি। ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প আছে অনেক, তবে হাসিমুখে শেষ করতে পারার তৃপ্তি অন্তত পেলেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৫৫/৮ (গুরবাজ ৬১, জাজাই ৩১, শফিকউল্লাহ ১৬, নাজিবউল্লাহ ৫, নবি ৪, নাইব ১০, ফজল ১২, রশিদ ৯*, আসগর ০, দওলত ০; এনডিলোভু ৪-০-২৩-০, জার্ভিস ৩-০-২৭-১, উইলিয়ামস ৪-০-৩৪-১, এমপোফু ৪-০-৩০-৪, বার্ল ১-০-১৩-০, মাদজিভা ১-০-৬-০, মুতুমবোদজি ৩-০-১৮-২)।
জিম্বাবুয়ে: ১৯.৩ ওভারে ১৫৬/৩ (টেইলর ১৯, মাসাকাদজা ৭১, চাকাভা ৩৯, উইলিয়ামস ২১*, মুতুমবোদাজি ১*; মুজিব ৪-০-২৮-২, দওলত ৩.৩-০-২৭-১, নাইব ৩-০-১৯-০, নবি ৪-০-৪০-০, রশিদ ৪-০-২৯-০, ফজল ১-০-১৩-০)।
ফল: জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রিস এমপোফু