লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার জামিরবাড়ি (ব্যাঙেরহাট) গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নারীসহ অন্তত ৩২ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে গুরুতর আহত ছয়জনকে পাঠানো হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাকি ২৬ জন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
শুক্রবার, ১৯ জুলাই সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এসময় বেশকিছু দেশীয় অস্ত্রসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।
গ্রামবাসী ও পুলিশ জানায়, ব্যাঙেরহাট এলাকার নুরুল হক প্রায় তিন বছর আগে প্রতিবেশি নূর ইসলামের কাছ থেকে এক একর আবাদি জমি কিনেছিলেন। জমি কেনার পর দখলও বুঝে পান তিনি। কিন্তু বছর দুয়েক আগে নূর ইসলামের স্বজন দাবি করে জামিরবাড়ি গ্রামের সদ্য অবসরে যাওয়া কারারক্ষী আজিজুল ইসলাম তার লোকজন নিয়ে জমিটি দখল করে নেন।
সর্বশেষ সেই জমি নিজেদের দখলে নিতে গত বৃহস্পতিবার সেখানে আমনের চারা রোপন করেন জমির ক্রেতা নুরুল হক। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়ে ওই দিনেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে কাগজপত্রসহ শুক্রবার থানায় আসতে বলে।
আজ শুক্রবার সকালে নুরুল হক ও তার পরিবারের লোকজন থানায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাড়িতে বৃষ্টির কারণে আটকে ছিলেন। এসময় আজিজুল ও হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে অন্তত ৫০ জন রামদা, ছুরি, বল্লম ও লাঠি নিয়ে বিরোধপূর্ণ সেই জমি আবারও দখল করে নেয়।
এরপর অতর্কিতভাবে নূরল হকের বাড়ি ঘিরে ফেলে হামলা চালায় তারা। এসময় নুরুল হকসহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে নুরুল হক, তার স্ত্রী, দুই ছেলেসহ কয়েকজন রয়েছেন।
পরিবারের লোকজনের চিৎকারে গ্রামবাসীরা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় নুরুল হকের পরিবারসহ অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের এসময় হামলাকারীরা হাসপাতালে আসতেও বাধা প্রদান করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূরল হক বলেন, ‘আজিজুল, মান্নান, রবিউল ও রানাসহ একদল মানুষ রামদা নিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামিরবাড়ি গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, ‘গ্রামবাসী এগিয়ে গেলে আমাদের উপরও হামলা চালানো হয়। অস্ত্রধারীদের বেশিরভাগেই ছিল বহিরাগত। তাদের সামনে যাকেই পেয়েছে তাদের ওপরই হামলা চালিয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত আজিজুল ও আব্দুল মান্নানের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তঃবিভাগ সূত্র মতে, হাসপাতালে ২৬জন নারী-পুরুষ ভর্তি হয়েছেন।
আহত ৬ জন রংপুর মেডিকেলে:
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক অজয় রায় জানান, কালীগঞ্জের হামলায় আহত এক নারীসহ ছয়জনকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। যাদের পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর।
কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ফরহাদ মন্ডল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসহ চারজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এইচএ/রাতদিন