এনআরসি নিয়ে কে মিথ্যে বলছেন মোদী না অমিত শাহ? রোববার রামলীলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার পরে এই প্রশ্নটাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারত জুড়ে।
ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেও সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশের সব রাজ্যে আসামের মতো জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হবেই, এবং তা হবে ২০২৪ সালের ভোটের আগেই। এমনকি এ বছর জুনে সংসদের সেন্ট্রাল হলে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানিয়েছিলেন, সারা দেশে এনআরসি চালু করাকে তাঁর সরকার অগ্রাধিকার দেবে।
অথচ আজ রামলীলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানালেন, এনআরসি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনও কথাই হয়নি! ২০১৪ সাল থেকে এনআরসি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। তাঁর দাবি, বিরোধীরা মিথ্যা বলছে। কেবল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অসমের জন্য এনআরসি করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দু’ঘণ্টার বক্তৃতা শেষে তাই কার্যত স্তম্ভিত বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ কে তা হলে সত্যি কথা বলছেন?’’
এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতায় আগুন জ্বলছে গোটা ভারতে। এই আবহে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর এই ‘নতুন’ দাবি সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক, এনআরসি-সিএএ প্রশ্নে সরকার যে কিছুটা ব্যাকফুটে, সেটা পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তিনি ধর্মের ভিত্তিতে কোনও দিন কোনও বিল আনেননি।
তা হলে কি নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও উদ্বেগের অবকাশই নেই? রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, তা-ও নয়। এনআরসি নিয়ে দ্বন্দ জিইয়ে রাখাটাই এখন বিজেপির কৌশল। কারণ, প্রধানমন্ত্রী আবার আজ পরোক্ষে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এখন না হলেও আগামীতে কখনও না কখনও এনআরসি হবেই। বিশেষ করে মুসলিমদের নাম করে বুঝিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা যে এ দেশের (মা ভারতী) সন্তান, এনআরসির সময় তার প্রমাণও দিতে হবে। মোদীর দাবি, ‘‘যিনি ভারতের মাটির মুসলমান, যাঁর পূর্বপুরুষ ‘মা ভারতী’র সন্তান, নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে তাঁর কোনও লেনদেন নেই।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই আশ্বাসবাণীর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অন্য বার্তা। মা ভারতী-র সন্তান হলে চিন্তার কারণ নেই ঠিকই। কিন্তু নিজেকে মা ভারতীর সন্তান হিসেবে প্রমাণ করার দায় কিন্তু মুসলিমদের থাকছেই। বিজেপির অবশ্য যুক্তি, ‘‘সে তো হিন্দুদেরও প্রমাণ দিতে হবে। শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ফারাকটি প্রধামন্ত্রী আজ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন।’’
বিরোধীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী আজ এক কথায় সংশয় দূর করতে পারতেন ‘এনআরসি হচ্ছে না’ বলে। তা না করে দল এবং অমিত শাহের কথার বিপরীতে গিয়ে এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে বিভ্রান্তি বাড়ালেন এবং সংশয় দূর করার অভিনয় করলেন। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘সরকার স্পষ্ট করুক, এনআরসি হবে কি হবে না।’
কিন্তু তা হলে কি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেছেন- প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা কটাক্ষ করে বলেন, ‘সাহেব (নরেন্দ্র মোদী) দিল্লিতে বলেছেন, এনআরসি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে সামঞ্জস্য নেই? দল ও সরকারের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়েছে? নাকি দু’জনে মিলে দেশকে বোকা বানাচ্ছেন?’ তৃণমূলের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘সিএএ এবং এনআরসি হচ্ছে বিজেপির যৌথ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী যা-ই বোঝানোর চেষ্টা করুন না কেন, বিজেপি যে এনআরসি গোটা দেশে করবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সুতরাং দেশবাসীকে কে ভুল বোঝাচ্ছে, তা জলের মতো স্পষ্ট।’’
বিজেপির অন্দরের খবর, অমিত শাহকে আপাতত ক’দিন এনআরসি নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটতে বলা হয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের পর এনআরসি সংক্রান্ত পুরনো টুইটও মুছে ফেলা হচ্ছে। সুত্র: আনন্দবাজার।