ঘর থেকে বেরুলেই প্রশ্ন, বদলে গেছে চিরচেনা রংপুর নগরী

রংপুরকে বলা হয় অটোরিকশার নগরী। এখানে বৈধ-অবৈধ মিলে অন্তত দশ হাজারেরও বেশি ব্যাটারি চালিত অটো ও সাধারণ রিকশা চলাচল করে। বিভাগীয় শহর হওয়াতে প্রতিদিন নগর জুড়ে থাকে লাখো মানুষের আনাগোনা। যানজট এখানকার নিত্য দুর্ভোগের রুটিন। কিন্তু করোনা সচেতনতায় বদলে গেছে নগরীর এই চিরচেনা দৃশ্যপট। রংপুর এখন জনশূন্য ভিন্ন এক নগরী। যেন অচেনা এক শহর।

করোনার ভাইরাস মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার ২৬ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি ঘোষিত টানা এই সাধারণ ছুটি ও আর সামাজিক দূরত্বই বদলে গেছে চির চেনা রংপুর শহর। এখন কোথাও যানজট নেই। নেই হাজার হাজার অটো রিকশার জটলা। নেই লাখো মানুষের পদচারণা।

ভিক্ষুকের আহাজারি নেই। হাট-বাজারে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানো লোকজন নেই। ফুটপাতে চায়ের দোকনো নেই। সড়কে ভারী ও হালকা যানবাহনও নেই শুধু জরুরী যানবাহন রয়েছে। নেই যানবাহনের বিরক্তিকর হর্ণের শব্দ।

এটি সম্ভব হয়েছে প্রশাসনের দৃঢ়তায়। হঠাৎ কিছু মানুষের দেখা মিললেও যুক্তি ছাড়া মুক্তি মিলছে না তাদের। অপ্রয়োজনে সড়কে ঘোরাফেরা করা মানুষদের ধাওয়া দেওয়াসহ তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

ছোট বড় মার্কেট, শপিংমল আর বিপণী বিতানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝুলছে তালা। পাড়া মহল্লয় কিছু খাবার দোকান ও ফার্মেসি খোলা থাকলেও সেখানে নেই কোনো জটলা। ফুরফুরে মেজাজে সময় কাটছে দোকানদাররা।

খেলার মাঠ থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, সড়ক-মহাসড়কে কোথাও নেই হৈ-চৈ। এমন জনশূন্য পরিবেশে বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও পাখপাখালি ফিরছে নীড়ে। র‌্যাব, পুলিশ আর সেনা সদস্যদের এই যৌক্তিক প্রশ্ন এড়াতে ঘরমুখো থাকছেন অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষেরা।

সন্ধ্যা নামলেই সড়কের ল্যাম্প পোস্টগুলো আলো ছড়ানো শুরু করছে বটে কিন্তু নির্জন নগরীতে রাত যত গভীর হচ্ছে ততোই ভিন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এমন বিচিত্র পরিবেশ আর ধুলো উড়া শান্ত নগরী দেখতে বাইরে বের না হয়ে উঁচু ভবনের ছাদ কিংবা জানালার পর্দা সরিয়ে নগরবাসী দেখছে তাদের চিরচেনা নগরীর অচেনা এই রুপ।

মানুষের বিচরণ ছাড়া প্রকৃতি ও পরিবেশ কতটা ভয়ংকর সুন্দর হতে পারে তার অনন্য উদাহরণ এ মূহুর্তে সম্ভবত এই অটোরিকশার নগরী রংপুর।

জেএম/রাতদিন