চামড়া শিল্পের অর্থনৈতিক প্রণোদনা আরও ৫ বছর

পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্যের শিল্পের বিকাশে এই খাতে আরও ৫ বছর অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই শিল্পের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চামড়া শিল্পের বিকাশের জন্য আর্থিক প্রণোদনা আরও অনন্ত ৫ বছর বহাল থাকবে।

বুধবার, ৩০ অক্টোবর সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার ও এন্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো -২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালে মধ্যে এই দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই লক্ষ্য অর্জনে চামড়া ও পাদুকা শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত সকলে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার হিসেবে আমরা ব্যবসা করি না কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য সব রকম সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে দিই। সেটা বাংলাদেশের পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতেও আমাদের সরকার সবসময় সক্রিয়। আমাদের রয়েছে অপেক্ষাকৃত সস্তা শ্রম। আমরা শ্রমিকদের ট্রেনিংও দিচ্ছি।

বিনিয়োগ, ব্যবসা ও রফতানি, বাণিজ্য সহজ এবং গতিশীল করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সারাদেশে ওয়ানস্টপ সুবিধা সম্বলিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। যার মধ্যে ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগ উভয়ই আমরা এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জায়গা করে দিতে চাই । কোম্পানির জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা তৈরি করে দিচ্ছি। আর এগুলোর কার্যক্রম যখন পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হবে তখন সেটা আমাদের প্রবৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রাখবে।

‘ইতিমধ্যে আমরা একাধিক টার্মিনাল ও নৌবন্দরের কাজও শুরু করে দিয়েছি। আঞ্চলিক যোগাযোগ কাঠামোর সঙ্গে বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগের প্রাণ কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আমাদের রয়েছে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটাই হচ্ছে আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটি ব্রিজ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।’

রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে রফতানিকে বহুমুখীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমার বিশ্বাস রফতানিতে বহুমুখীকরণ করতে পারলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। আমাদের যে প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করেছি সেটাও আমরা বৃদ্ধি করতে পারব। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের রফতানির এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ২০২১ সালে রফতানি থেকে আয় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়া যাবে।

‘আপনারা জানেন রফতানি বহুমুখী করণের অংশ হিসেবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় উন্নয়ন কৌশল একটি অগ্রাধিকার মূলক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এজন্য চামড়া ও পাদুকাজাত শিল্পখাতের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাত্র এক দশক আগেও এ খাতের সিংহভাগ রফতানি আয় আসতো কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানি করে। আমাদের সরকার গত দুই মেয়াদে প্রণোদনা নীতি সহকারে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য কারখানার প্রসার ঘটিয়েছে। বিনিয়োগে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এখন এই খাতে রফতানি আয় ৮৬ শতাংশ আসছে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে।’

তিনি বলেন, রফতানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত চারটি খাতের উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। যোগাযোগের জন্য আমরা ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসির উপর জোর দিয়েছি। পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়কে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এই খাতের আয় তৈরি পোশাকের পরেই জায়গা করে নিয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে প্রায় ১.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। আমাদের ক্রমবর্ধমান কাঁচা চামড়ার পুরোটাই ফিনিশ প্রোডাক্ট হিসেবে রফতানি করতে পারলে আমরা অনায়াসে ২০২২ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করতে সক্ষম হবো।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।

এনএন/ রাতদিন