ছেলের জন্য টানা ৪৪ বছর রোজা রেখেছেন মা

সখিরন নেছা ওরফে ভোজা। প্রায় ৪৪ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেতে মসজিদ ছুঁয়ে শপথ করেছিলেন। শপথে সৃষ্টিকর্তাকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আর যেদিন থেকে ছেলেকে ফিরে পাব সেদিন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমি রোজা রাখবো ।’

এর পরপরই তিনি তার ছেলে শহিদুল ইসলামকে ফিরে পান। আর তখন থেকেই শুরু ওই মায়ের রোজা রাখা। টানা ৪৪ বছর রোজা রাখা সেই সখিরন ৭৫ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। সোমবার, ৮ জুলাই বিকালে তিনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামে। তিনি ৩ ছেলে মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের বিধান মতে বছরে কয়েকটি রোজা ছাড়া দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর রোজা রেখেছেন।

জাগো নিউজের খবরে বলা হয়, বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যাবার গেলে তাকে খুঁজতে খুঁজতে তিনি নিয়ত করেন ছেলেকে ফিরে পেলে, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই রোজা রাখবেন। সেই থেকে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রোজা রেখে গেছেন।

গ্রামবাসী জানান, ১৯৭৫ সাল তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলামে বয়স ১১ বছর হবে। সে একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েও পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন তাকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিল।

পরিবারের লোকজন ছাড়াই সখিরন নেছা একা একা ছেলেকে খুঁজে বেড়াতেন। প্রায় দেড়মাস পর, রমজান মাস আসলে, রোজা থাকা অবস্থায় একদিন সন্ধ্যার আগে গ্রামের কাজীপাড়া জামে মসজিদের কাছে ছেলেকে খুঁজতে গেলেন। না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসছিলেন। মসজিদের কাছে আসতেই, মসজিদে হাত দিয়ে শপথ করেন ছেলেকে ফিরে পেলে যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন রোজা রাখবেন।

মা ফিরে এসে দেখতে পান, ছেলে শহিদ বাড়িতে এসেছে। সেই থেকে সখিরন দীর্ঘদিন রোজা রেখেছেন।

তাঁর ছেলে শহিদুল ইসলাম জানান, আমার মা আমার জন্য সারা জীবন রোজা রাখবেন বলে যে সিন্ধান্ত নিয়ে রোজা পালন করেছেন। পৃথিবীতে এমন মা আছে বলে আমার জানা নেই।

এবি/রাতদিন