তিস্তা ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর মহাপরিকল্পনা, বাঁচবে লালমনিরহাট, ঘুরে দাড়াবে উত্তরাঞ্চল

তিস্তার নিয়মিত ভাঙন রোধ, পাশাপাশি এই এলাকায় আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে নদীর দুই পাড় ঘিরে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।  প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উত্তরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কয়েক লাখ কৃষি জমি উদ্ধার করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই বছর ধরে তিস্তা নদী সার্ভে, পরিকল্পনা, ডিজাইন ও অর্থ ব্যয়ের পরিমানসহ সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন শুধুমাত্র বাস্তবায়নের পথে। এর ফলে তিস্তা নদীর দুই পাড় একটি পর্যটন নগরী রূপে গড়ে উঠতে যাচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্রপীড়িত জেলা লালমনিরহাটকে কয়েক বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে লালমনিরহাট জেলাকে দারিদ্রমুক্ত করতে কাকিনার মহিপুরে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে লালমনিরহাট জেলা তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের আওতায় আসত। কিন্তু জাতির জনককে পঁচাত্তরের পনেরই আগষ্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। ফলে কাকিনায় আর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এরই মধ্যে ভারতে নির্মিত সেচ প্রকল্পের কারণে শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি নিয়ন্ত্রন করায় তিস্তা নদী শুকিয়ে যায়। তিস্তা পাড় হয়ে উঠে মরুভুমির মত। আবার বর্ষায় তিস্তা নদীর পানির তোড়ে জেলাবাসী দফায় দফায় বন্যার কবলে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। নদী ভাঙ্গণে নিঃস্ব হয় লাখ লাখ মানুষ।  উভয় মৌসুমে তিস্তাপাড়ারে মানুষ থাকে মহাবিপাকে।

পরবর্তিতে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ বছরের ঐকান্তিক চেষ্টায় নানা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে তিস্তাপাড়ের মানুষকে নিয়ে আসেন। তিস্তা নদীর চরের বাড়ি গুলোকে বন্যামুক্ত করতে ভিটা উচু করে দেয়া হয়। বাড়িতে বাড়িতে খামার করতে সরকারি কর্মসূচি হাতে নেয়। গবাদি পশু পালন সহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে চরের নারীদের সম্পৃক্ত করাসহ চরে শুস্ক মৌসুমে নানা ফসল ফলাতে সরকারি ভর্তুকি দেয়া হয়। ফলে চরের মানুষেরা জীবন যাপনের স্বাভাবিক নিশ্চয়তাটুকু লাভ করে।

এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থায়ীভাবে তিস্তা পাড়ের মানুষের র্দুদশা লাঘবে প্রাথমিক ভাবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এই প্রকল্পের আওতায় তিস্তা নদীর দুই পাড় মিলে ২২০ কিলোমিটার উচুঁ গাইড বাধ নির্মাণ করা হবে। বাঁধের দুই পাশে থাকবে সমুদ্র সৈকতের মত মেরীন ড্রাইভ। থাকবে রিভার ড্রাইভ রোড় (চওড়া প্রস্থ মসৃণ রাস্তা)। যাতে পর্যটকরা লং ড্রাইভে যেতে পারবেন।

নদী পাড়ের দুই ধারে গড়ে তোলা হবে হোটেল, মোটেল, রেষ্টুরেন্ট। স্থাপন করা হবে দেড়শত মেগাওয়াট সৌর বিদূৎ কেন্দ্র ।

তিস্তা নদীর বর্তমান নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় এর প্রশস্ততা কোথাও ৫ কিলোমিটার কোথাও আবার ১০ কিলোমিটার। এই পরিকল্পনায় তিস্তা নদীর গভীরতা বাড়াতে খনন কাজ করা হবে। বাড়ানো হবে নদীর গভীরতা। সারা বছর নৌ চলাচলের মত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো: আবু জাফর বলেন,‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ জেলা একদিন শিক্ষা ও সম্পদে সমৃদ্ধশালী হবে।’

মহাপরিকল্পনায় নদীর প্রস্থ এক কিলোমিটার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে নদীর দুই ধারে কয়েক লাখ হেক্টর ফসলের জমি উদ্ধার হবে। উদ্ধারকৃত জমিতে ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদূৎ উৎপাদনে পাওয়ার গ্রীড বসানো হবে। সেখানে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদূৎ উৎপাদন হবে। নদী পাড়ে থাকবে ইকোনমি জোন।

নদী খনন করে গভীরতা বাড়িয়ে চালু করা হবে নৌ পথের রুট। যাতে স্বল্প খরচে নদী পথে অনেক বেশী পণ্য পরিবহন করা যায়। গড়ে তোলা হবে সরকারি কর্মকর্তা কমচারিদের বসবাসযোগ্য সকল নাগরিক সুবিধা সমৃদ্ধ নগর। উদ্ধারকৃত জমি ভুমিহীনদের মাঝে কৃষি কাজের জন্য বিতরণ করা হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে জেলায় বেকার সম্যসা থাকবেনা। জেলা হয়ে উঠবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ।

এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুই বছর আগে তিস্তা নদীর তীঁরে বাঁধ নির্মাণ, নগর নির্মাণ, সৌর বিদূৎ কেন্দ্র নির্মাণ, নদী খনন, নদীর প্রশস্ততা হ্রাস, রিভার ড্রাইভ, পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রেষ্টুরেন্টসহ নানা পরিকল্পান বাস্তবায়ন করতে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না পাওয়ারকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি দুই বছর ধরে তিস্তা নদী সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা ডিজাইনসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কৌশল ও সম্ভাব্য ব্যয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ধরে ১টি প্রজেক্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

সেখানে প্রকল্পটি যাচাইবাচাই শেষে ইআরডিতে জমা হয়েছে। আর্ন্তজাতিক পানি সম্পদ বিভাগ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছে। এখন প্রজেক্ট প্রোপোজাল বাস্তাবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক খরচ অনুমোদন দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রজেক্ট যত দ্রুত শুরু করা যায় তার জন্য ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এমন কী জিও’র মাধ্যমেও হলেও তিনি প্রকল্প শুরু করতে চান। এদিকে রংপুর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহা সড়ক ফোর লেনের কাজ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় রংপুর হতে বুড়িমারী পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফোর লেনের কাজ শুরু হবে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, চায়না পাওয়ার কোম্পানি দুই বছর ধরে তিস্তা পাড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাপরিকল্পনায় নির্মাণকৃত প্রকল্প বাস্তবায়নে নক্সাঁ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করেছে। খুব শিগগির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুর হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে এই জেলার বর্তমান চিত্র রাতারাতি পাল্টে যাবে।

জেএম/রাতদিন