তীব্র ভাঙনের মুখে তিস্তার বামতীর, ঝুঁকিতে সলেডি স্প্যার বাঁধ-২

আবারো তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর বামতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সলেডি স্প্যার-২। নির্ঘুম রাত কাটছে বাঁধের ভাটিতে থাকা হাজারো পরিবারের।

শনিবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে বাঁধটির প্রায় ৭৭ মিটার এলাকায় এক তৃতীয়াংশ বিলীন হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে হঠাৎ ধ্বসে পড়তে শুরু করে। যা বালুর বস্তা ফেলে রক্ষার প্রানপণ চেষ্টা করে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, তিস্তা নদীর বাম তীরের ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষায় ২০০৩-০৪ সালে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন এলাকায় সলেডি স্প্যার বাঁধ ২ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বছর কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিলে তা সংস্কার শুরু করে। সেই সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে তিস্তায় পানি কমে যাওয়ায় হঠাৎ ভাঙনে কবলে পড়ে বাঁধটি। স্থানীয়রা রাতেই মসজিদের মাইকে মাইকিং করে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে নিজেদের বসত বাড়িতে থাকা বস্তায় বালু ফেলে কিছুটা রক্ষা করেন। রাত যেতে না যেতেই মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পুনরায় ক্ষতস্থানে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে বাঁধটির ১২ মিটার এলাকার এক তৃতীয়াংশ ধ্বসে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধের একাংশ কেটে বালু বস্তা ভর্তি ভাঙন রোধের চেষ্টা চালায় স্থানীয়রা। ৩০ সেপ্টেম্বর আবারো নতুন এলাকা ধ্বসে পড়ে ২৫ মিটার বিলীন হয়।

বাঁধটি রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ৬ দিনে ১৭৫ কেজি ওজনের ৩ হাজার ৮ শত জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মাঝে শনিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে তৃতীয় দফায় বাঁধটির নতুন অংশ ধ্বসে পড়ে। এভাবে ৩ দফায় বাঁধটির প্রায় ৭৭ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ফলে আবারো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমুল পরিবারগুলো।

শনিবার (৩ অক্টোবর) বিকেল থেকে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো ঘর বাড়ি থেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছেন নিরাপদ স্থানে। পরিবার পরিজন নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এসব ছিন্নমুল মানুষ। বাঁধটি রক্ষায় ব্যর্থ হলে ভাটিতে থাকা কয়েক হাজার বসতভিটা নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়ার শঙ্কায় কান্নার রোল পড়েছে নদী পাড়ে।

জরুরী ভিত্তিতে করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বালুর বস্তা ডাম্পিং কাজে ধীর গতি ও নিম্নমানের বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা দাবি করছেন নামমাত্র শ্রমিক দিয়ে কচ্ছবগতিতে কাজ করছে পাউবো ঠিকাদার। ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় বাধ্য হয়ে স্থানীয়রাই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ হলেও ঠিকাদার ঠিকই শতাধিক শ্রমিকের হিসাব গুনছেন। একই সাথে সামান্য কিছু বস্তা ফেলে নামমাত্র কাজ করে হাজার হাজার বস্তার ভাউচার তৈরী করছেন। ফলে সরকারী অর্থ অপচয় হলেও বাঁধ রক্ষা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ কারলে আতঙ্কিত লোকজন ঘরের আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

জরুরী কাজের ঠিকাদার কর্মকার এজেন্সির প্রতিনিধি ওবায়দুর রহমান বলেন, গত ৬ দিন ধরে দৈনিক একশত জন শ্রমিকের মাধ্যমে বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হয়েছে। গভীরতা বাড়ায় বস্তা ফেলা মাত্রই তা ডুবে যাচ্ছে। পাউবোর ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের বস্তা ডাম্পিং চলমান রয়েছে। চেষ্টার ত্রুটি করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করেছে, বাঁধটির সামনের অংশে গত শুস্ক মৌসুম ধরে টানা বালু উত্তোলন করায় বাঁধটি ধসে যাচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি বাঁধটিতে অপরিকল্পিত বসত বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করায় সংস্কার কাজ করা কষ্টকর এবং বাঁধটির স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে। ফলে পানির চাপ বাড়লে নতুন নতুন এলাকায় ধ্বসে যাচ্ছে।

স্থানীয় মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, শনিবার বিকেলে হঠাৎ তৃতীয় দফায় ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে বাঁধটি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা মিলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করছি। রক্ষায় ব্যর্থ হলে সহস্রাধিক বসত বাড়ি নদীর স্রোতে ভেসে যেতে পারে। তাই এসব পরিবারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে থাকা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) আব্দুল কাদের বলেন, ৩ দফায় বাঁধটির প্রায় ৭৫ মিটার অংশের এক তৃতীয়াংশ ধ্বসে গেছে। এটি রক্ষায় গত ৬ দিনে জরুরী কাজের অংশ হিসেবে ৩ হাজার ৮০০টি ১৭৫ কেজি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। যা চলমান রয়েছে। আরো সাত শতাধিক জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে।

এনএ/রাতদিন