কমরেড আব্দুস সামাদ। জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। যুক্ত ছিলেন বাম রাজনীতির সাথে। গুরুত্বপূর্ণ পদচারণা ছিল বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে। পেশাগত জীবনে দায়িত্ব পালন করেছেন রেলওয়ে কারখানায়।
বলতে গেলে গোটা জীবনেই তিনি নিজেকে দেশের জন্য, মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি যেমন ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। মারা যাওয়ার পরেও তিনি রেখে গেলেন অনন্য অবদান।
প্রায় এক যুগ আগেই তিনি তাঁর দেহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের জন্য দান করেছিলেন। তাই মারা যাওয়ার পর গতকাল রোববার, ২৮ জুলাই ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর মরদেহ তুলে দেয়া হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
৭৮ বছর বয়সে গত শনিবার রাতে বার্ধক্যজনীত কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর এলাকার সাহেবপাড়া (মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট) এলাকার বাড়িতে মারা যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে, নাতিনাতনি, আত্মীয়-স্বজন,বন্ধুবান্ধবসহ অনেক গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রবীণ নেতা তাঁর জীবদ্দশায় ২০০৭ সালের ২১ জুন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হবু চিকিৎসকদের পড়াশোনার জন্য উইল(দান) মরোনত্তর দেহ দান করেন। ফলে গতকাল দুপুরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আব্দুস সামাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে মরদেহটি গ্রহণ করেন সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া।
এ সময় সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মীর হোসেন, সৈয়দপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসনাত খান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার একরামুল হক সরকারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রথমে ইউএনও এবং পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে কমান্ডার একরামুল হক সরকার ও সাংগঠনিক কমান্ডার এ কে এম ফজলুল হক মরহুমের কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন। বাংলদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নীলফামারী জেলা শাখা ও সৈয়দপুর উপজেলা শাখা, রেলওয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সৈয়দপুর শাখাসহ বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এরপর নীলফামারী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে শহরের সাহেবপাড়া ঈদগাহ্ মাঠে বাদ জোহর আব্দুস সামাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শোক : মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের মৃত্যুতে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মো. শাহাদাত হোসেন, নীলফামারী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীদাম দাস, সৈয়দপুর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী নুরুজ্জামান জোয়ারদার ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জাভিস্কো, ম. আ. শামীম, রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন সৈয়দপুর কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান রোবায়েত এবং ওপেন লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক দলিলুর রহমার দিলু গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এইচএ/রাতদিন