নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে পুরনো জেএমবি! উত্তরাঞ্চলীয় প্রধানসহ গ্রেপ্তার ৪

একের পর এক দলপ্রধান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পরও নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে পুরনো জেএমবি। গত কয়কদিন আগে গ্রেনেড তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ বগুড়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে পুরনো জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান আতাউর রহমানসহ চার জঙ্গি।  পুলিশ সদর দপ্তরের ল-ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি) ও বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সংগঠনকে নতুন করে সংগঠিত করার কথা জানিয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই পুরনো জেএমবি টার্গেটেড কিলিং (বেছে বেছে হত্যা) পরিচালনা এবং সংগঠনের ফান্ডের অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো কাজ করে আসছিল। সংগঠনকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টায় তারা জামা’আতুল মুজাহিদিন অব ইন্ডিয়া (জেএমআই) গঠন করেছে। বর্তমানে দলের শক্তি বাড়াতে অনলাইনে কেন্দ্রীয়ভাবে দায় স্বীকার বা প্রপাগান্ডা চালাতেও দেখা যাচ্ছে জেএমবিকে। এ কাজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সালাউদ্দিন সালেহীন। এরপর সালেহীন ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কিংবা সেখানে থেকেই দল পরিচালনা করছেন বলে গুজব রয়েছে।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দাওয়াতি শাখাপ্রধান (দলপ্রধান) আতাউর রহমান ওরফে হারুন ওরফে আরাফাত (৩৪), পুরনো জেএমবির রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বায়তুল মালপ্রধান (চাঁদা সংগ্রহ) ও নওগাঁ জেলার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান ওরফে নাহিদ ওরফে মোরছাল (৪২), পুরনো জেএমবির গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বশীল জহুর“ল ইসলাম ওরফে সিদ্দিক (২৭) ও পুরনো জেএমবির বগুড়া জেলার দায়িত্বশীল মিজানুর রহমান (২৪)। 

তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানান পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বগুড়ার পাকুড়তলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, দুটি চাপাতি, একটি চাকু, এক কেজি বিস্ফোরক, আটটি গ্রেনেড তৈরির বডি, ১০টি গ্রেনেড তৈরির সার্কিট বডি, বেশ কিছু রেজিস্ট্যান্স, ক্যাপাসিটরসহ গ্রেনেড তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বেটুবাড়ীর আব্দুল করিম সরকারের ছেলে আতাউর রহমান সেখানকার একটি স্কুলের ল্যাব সহকারী। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে সন্ত্রাস নিরোধ আইনে মামলা হয়। ২০১৩ সালে তিনি জেএমবিতে যোগ দিয়ে রংপুর বিভাগের দাওয়াতি বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দাওয়াতি বিভাগের প্রধান হন। এর মধ্যে নওগাঁ জেলার পোরশা থানার কাশিপাড়া গ্রামের গোলাম মোহাম্মদের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে নাহিদ ২০০৪ সাল থেকে জেএমবির সক্রিয় সদস্য।

পুরনো জেএমবির গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বে থাকা জহুরুল ইসলাম ওরফে সিদ্দিক গাইবান্ধার রামচন্দ্রপুর সোনারপাড়া গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের ছেলে। ২০১১ সালে ঢাকায় একটি সোয়েটার কম্পানিতে চাকরি করার সময় জেএমবিতে যোগ দিয়ে গাইবান্ধা জেলায় দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডিম, পেপার ও পপকর্ন বিক্রেতার ছদ্মবেশে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতেন সিদ্দিক।

পুলিশ সূত্র মতে, পুরনো জেএমবির র‌্যাডিক্যালাইজেশন (চরমপন্থীকরণ) পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। কেউ ধরা পড়ার পর দ্রুতই সেই শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এটিই এখন একমাত্র থ্রেট বা হুমকি। এটি বন্ধ করা না গেলে সামনের দিনগুলোতে জঙ্গিবাদ নিয়ে আবারও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকে।

২০১০ সালের পর নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের পর জেএমবি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে একটি অংশ আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘নব্য জেএমবি’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরের বছর থেকে তারা সারা দেশে টার্গেটেড কিলিং শুরু করে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতেও হামলা চালিয়েছিল এই নব্য জেএমবি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় হবে আগামী ২৭ নভেম্বর।

পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, বগুড়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বর্তমানে পুরনো জেএমবির সমতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য জানা যাবে।

সূত্র কালের কন্ঠ

এনএ/রাতদিন