লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা পাবলিক দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজার রহমানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে একাধিক অভিযোগের সত্যতা মিললেও অদৃশ্য খুটির জোরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ১ আগস্ট সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আজিজার রহমান। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিদ্যালয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের সৃষ্টি হয়।
বিদ্যালয়ের আয়- ব্যয়ের গড়মিল দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য করা, ক্ষোভের বর্শবর্তী হয়ে শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে তাঁর পছন্দের লোককে দিয়ে কমিটি গঠন করা, একই ব্যক্তিকে দিয়ে বার বার এ্যাডহক ও ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ অসংখ্য অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বিগত ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ের সহকারি মৌলভী শিক্ষক হাফিজুর রহমান ও দাতা সদস্য প্রার্থীগণ এবং একাধিক অভিভাবক তার বিরুদ্ধে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই বছর নভেম্বরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করে দেন ইউএনও।
তদন্ত দল প্রধান শিক্ষক আজিজার রহমানের দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারী, ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত না করে মনোনীত প্রার্থী দিয়ে পকেট কমিটি গঠন ও শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়মের সত্যতা পায়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তদন্তদল ইউএনও বরাবর ওই রিপোর্ট জমা দেয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে করা অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতি বছরে বার্ষিক ২০ লক্ষাধিক টাকা আয় হলেও বিদ্যালয়ের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে মাত্র ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা জমা করেন প্রধান শিক্ষক। এভাবে টাকা আত্মসাতের প্রমান পায় তদন্ত দল। এমনকি সে সময়ের টাকা আদায়ের রশিদ বইয়ের মুড়িও খুঁজে পায়নি তারা।
বিদ্যালয়ের পুকুর ও দোকানপাট থেকে আদায়কৃত টাকার হিসাবও পায়নি তদন্ত দল।
২০১৮ সালে ৫ লাখ ও ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সাবসিডিয়ারী পরীক্ষা বাবদ শিক্ষার্থীর নিকট থেকে নেওয়া টাকা অদ্যাবধি বিদ্যালয় এ্যাকাউন্টে জমা করা হয়নি।
২০১৫ সালে পুলিশের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ও তিন মাস জেল হাজতে থাকা আসামী মতিয়ার রহমানকে ২০১৮ সালে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে দুই জন ভুয়া পরীক্ষার্থীর অংশ গ্রহণে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক আজিজার রহমান অর্থের বিনিময়ে মতিয়ার রহমানকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন-এমন অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য ওই নিয়োগ বহাল রাখতে পারেননি তিনি। বর্তমানে মতিয়ার রহমান সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। বিদ্যালয়ের আয়- ব্যয়, আদায় রশিদ, বিল- ভাউচারের কোনো মিল নেই। তিনি শুধু টাকা পকেটে পোরার ধান্দায় থাকেন।
প্রধান শিক্ষক আজিজার রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভুয়া।’
পাটগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইআর/রাতদিন