রংপুরের পীরগঞ্জের প্রায় ২ শতাধিক চালকল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খাদ্য কর্মকর্তা ও চালকল মালিকরা । চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হতে না হতেই আবারো চালকল সার্ভের (ফিটনেস) নির্দেশ দেয়ায় ফেঁসে যেতে পারেন খাদ্য বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবার পর ১৮ সেপ্টেম্বর নতুন ওই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যে সকল চালকল থেকে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ, কাগজে আছে, মাঠে নেই এমন চালকলও বরাদ্দ পেয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
এখন সেগুলোর পরিদর্শন প্রতিবেদন পক্ষে নিতে চালকল মালিকরা দৌড়ঝাপ করছেন। পাশাপাশি আবারো সার্ভের নির্দেশে প্রভাবশালী, সিন্ডিকেট সদস্য ও দলীয় সংশ্রবে থাকা চালকল মালিকেরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।
উপজেলা খাদ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এবারে ইরি-বোরো মওসুমে পীরগঞ্জে ৫ হাজার ৫৯১ মে. টন চাল সংগ্রহের জন্য ২০৬টি চালকলের মালিক (মিলার) খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করে। এবারে প্রতি টন সেদ্ধ চাল ৩৬ হাজার টাকা এবং আতপ চাল ৩৫ হাজার টাকা সরকার নির্ধারন করে। খাদ্য বিভাগ অটো রাইস মিলের চাল ক্রয় করায় অনেক মিলার বেকায়দায় পড়ে তাদের বরাদ্দ পত্র বিক্রি করে দেন।
দশ জন মিলার নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, হাস্কিং মিলে (চালকল) চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও খাদ্য বিভাগ অটোরাইস মিলের চাল ক্রয় করায় আমরা চাল উৎপাদন করতে পারিনি। ফলে অধিকাংশ চালকল অলস পড়ে থাকে। গত মে মাসে চাল সংগ্রহ শুরু হয় এবং ১৫ সেপ্টেম্বর তা শেষ হয়। সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার পরই ২০১৯-২০২০ সালের আমন সংগ্রহ উপলক্ষে চালকলগুলো সার্ভে করণের জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সকল উপজেলায় নির্দেশ দেন।
নির্দেশে রয়েছে, আসন্ন আমন সংগ্রহ মওসুমে সরকার লাইসেন্সধারী বৈধ চালকলের পাক্ষিক ছাটাই ক্ষমতার ভিত্তিতে সচল মিলের সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হবে। কোন অবস্থাতেই অচল বা বন্ধ, ত্রুটিযুক্ত ও পুর্নাঙ্গ অবকাঠামো বিহীন মিলের সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হবে না।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে সার্ভের কাজ চলছে। মিলাররা ওই নির্দেশ পেয়ে দৌড়ঝাপ করছেন। কারণ ৩ ভাগের ২ ভাগ চালকলই বন্ধ, অচল বা শুধু কাগজে কলমে রয়েছে। চালকল সচলের প্রতিবেদন পক্ষে নিতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছেও তারা তদবির শুরু করেছেন।
উপজেলার চালকলগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক চালকল কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। আবার অনেক চালকল বন্ধ করে গরুর খামার, তুলার গোডাউন, কাঠ ফাড়াই মেশিন স্থাপনসহ অন্য ব্যবসা করা হলেও চালের বরাদ্দ পেয়েছে।
আরও দেখা গেছে, চালকলগুলোর চাতাল মাঠে ঘাস গজিয়েছে, ফিল্ডও ফেঁটে চৌচির। চরছে গবাদিপশু। হাউজ-হান্ডি (ধান ভেজানো-ধান সিদ্ধ করার যন্ত্র) নেই। প্রশ্ন উঠেছে মাঠপর্যায়ের খাদ্য বিভাগের পরিদর্শন কর্মকর্তারা কিভাবে এই অযোগ্য, অচল, কাগুজে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া চালকলগুলো সচল হিসেবে প্রতিবেদন দিয়েছে।
পীরগঞ্জের রায়পুর ইউনিয়নের বালুয়াহাটে নুরু সরকারের চালকলটিতে এখন বসেছে কাঠ ফাঁড়াই মেশিন। উপজেলার দু’জন ব্যবসায়ীর আয়ত্তে অর্ধ শতাধিক চালকল রয়েছে। এছাড়াও কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে উপজেলার অধিকাংশ চালকল। খাদ্য বিভাগও তা স্বীকার করেছে।
পীরগঞ্জের খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছায়েদুল ইসলাম বলেন, অচল, অযোগ্য চালকল নিয়ে বেকায়দায় আছি। তবে সার্ভে কার্যক্রমে কোন স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি হবে না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের বলেন, প্রকৃত মিলারদের কাছ থেকে খাদ্যশষ্য সংগ্রহ করার জন্যই উপজেলা পর্যায়ের মিলগুলো সার্ভে করা হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন সঠিকভাবে করা হলে অনেক কর্মকর্তা ফেঁসে যেতে পারেন। এমনকি কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের তোপের মুখেও পড়তে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট ওই সুত্রটি জানিয়েছে।
এনএইচ/রাতদিন