বাজারের ধান প্যাকেটে ঢুকে হচ্ছে বিএডিসি’র বীজ!

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) তালিকাভুক্ত ‘কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স’রা  হাট থেকে ধান কিনে বিএডিসি‘র কাছে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এসব বীজই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে চলে যাচ্ছে সাধারণ চাষিদের মাঝে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অধীনে রংপুর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সের তালিকাভুক্ত প্রকৃত চাষীদের জমিতে উৎপাদিত ধান বীজ ধান হিসেবে নির্দিষ্ট মুল্যে প্রতিবছরই কিনে থাকে।

বিএডিসির পীরগঞ্জ ব্লকের অধীনে উপজেলার ভুজুবাড়ী গ্রামের ৩ প্রান্তিক চাষি জিয়াউর রহমান, মনিরুজ্জামান ও হামেদুজ্জামানও কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স। তাদের মধ্যে স্কীম লিডার জিয়াউর রহমান। স্কীমে জিয়াউর ও মনিরুজ্জামানের দেড় বিঘা করে মোট ৩ বিঘা (৫০ শতক) জমি এবং হামেদুজ্জামানের কোন জমি নেই।

তারপরও ওই তিন চাষি বিএডিসির  ১৯ একর জমির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তারা দীর্ঘ একযুগ ধরে রংপুর বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তার সাথে গোপন আঁতাত করে  একর প্রতি  ১ টন করে প্রতিবছরই ১৯ টন বীজ ধান দিয়ে আসছে। এসব ধানের পুরোটাই হাট থেকে কেনা । অনুসন্ধানে এমনটাই জানা গেছে।

জানা গেছে, সরকার চলতি বছর বিএডিসি’র কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সদের কাছ থেকে প্রতি টন বীজ ধান ৩৮ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছে। এতে প্রতিমন ধানের মূল্য দাড়ায় ১ হাজার ৫২০ টাকা।  বাজারে ধানের মুল্য ‍কম হওয়ায় বীজ ধান ক্রয়ে মুনাফা হচ্ছে তিনগুন।

যে কারণে পীরগঞ্জ ও রংপুর বিএডিসি’র একাধিক কর্মকর্তা ভুজুবাড়ীর  জিয়াউর রহমান নামের এক প্রান্তিক কৃষকের মাধ্যমে হাট-বাজার থেকে ধান ক্রয়ের পর অন্য চাষির নামে বরাদ্দ দেখিয়ে বীজ ধান ক্রয় করছে।  এ জন্য কর্মকর্তারা প্রতিটি ধানের বস্তায় (৭৫ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে, গত বছরও ভুজুবাড়ীর জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার বস্তা (প্রায় ১০৭ টন) বোরোর বীজ ধান ক্রয় করেছে। ওই ধান ভেন্ডাবাড়ী হাট থেকে ক্রয় করা হয়।

এবারও একই প্রক্রিয়ায় ধান বীজ সংগ্রহ করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই জিয়াউর রহমান কয়েকশত বস্তা ধান ভেন্ডাবাড়ী হাট থেকে ক্রয় করে সাধারণ চাষির নাম ব্যবহার করে রংপুরে আলমনগরে থাকা বিএডিসি’র গুদামে সরবরাহ করেছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিএডিসি’র পীরগঞ্জ অফিসের ডিএডি (উপ-সহকারী পরিচালক) হারুন মন্ডল বলেন, ‘আমরা মানসম্মত বীজধানই ক্রয় করে থাকি।’

রংপুর বিএডিসি’র ডিডি আবু তালেব মিয়া উৎকোচ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘অবশ্যই চাষির জমিতে উৎপাদিত ধানই ক্রয় করবো। হাট-বাজার থেকে ধান ক্রয় করা হলে তা নেয়া হবে না।’

তিনি জানান, অন্যের জমি বর্গা নিয়েও কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স হতে পারে।

এসকে/রাতদিন