চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিসর, তুরস্ক, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন থেকে প্রতিদিন আমদানি হচ্ছে পেঁয়াজ। বড় শিল্প গ্রুপগুলোর আমদানি করা পেঁয়াজও আসার পথে। তার পরও পেঁয়াজের বাজার কেবলই ঊর্ধ্বমুখে ছুটছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের দরে লাগাম টানতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা দুটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অনেকবার অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত; দরও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুফল মেলেনি। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দামে; কেজি ১৭০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ পাইকারিতে কেজি ১৬০ এবং চীন ও তুরস্কের পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তার পরও প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।
পেঁয়াজের অতি অস্বাভাবিক বাজারে লাগাম টানতে তাত্ক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের অন্তত ১০ জন আড়তদার কালের কণ্ঠকে বলেন, দুভাবে খুব দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রথমত, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বড় শিল্প গ্রুপগুলো ঘোষিত বড় চালান দ্রুত দেশে পৌঁছানো এবং ছোট আমদানিকারকদের ব্যাংকের ঋণসুবিধা নিশ্চিত করা।
খাতুনগঞ্জ কাঁচা পণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ছোট আমদানিকারকরা ভারতের বদলে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সংকট সামাল দিতেন অনেক আগেই। কিন্তু ভারত যেকোনো সময় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে পারে—এমনটা চিন্তা করে তাঁরা বিকল্প দেশ থেকে বড় পরিসরে আমদানির ঝুঁকি নিতে সাহস পাচ্ছেন না।
খাতুনগঞ্জে ২০ বছর ধরে আদা-রসুন আমদানি করছেন ফরহাদ ট্রেডিংয়ের কর্ণধার নুর হোসেন। তিনি বলেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বেশ কয়েকবার পেঁয়াজ কিনতে দর নিয়েছিলাম। কিন্তু ঝুঁকি নিতে পারিনি। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজের ঋণপত্র বা এলসি খুলতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত। এই নিশ্চয়তা পেলে ছোট আমদানিকারকরা নিজেদের উদ্যোগেই বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবেন। আর সেই পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যাংক ঋণ পেতে সরকারি সহযোগিতা লাগবে।
আরেক আড়তদার সোলায়মান বাদশা বলেন, এর আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যখনই বিকল্প দেশ থেকে ব্যাপক হারে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে তখনই ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ফলে পেঁয়াজ এনে পুঁজি হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ভারত পেঁয়াজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩১ হাজার টন।
পেঁয়াজের ঋণপত্র খোলার আগে আমদানি অনুমতিপত্র নিতে হয় কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর থেকে। চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৬ হাজার ১৬২ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে।
বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপপরিচালক ড. আসাদুজ্জামান বুলবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ঋণপত্র খোলার জন্য চার মাস মেয়াদি আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। বাজারে যেহেতু চাহিদা সংকট রয়েছে, সে জন্য চার মাস নয়, অনেক আগেই সব পেঁয়াজ আমদানি হয়ে চলে আসে। তিনি বলেন, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত মিসর, চীন, তুরস্ক, মিয়ানমার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান থেকে আসা প্রায় ছয় হাজার টন পেঁয়াজ বন্দর থেকে ছাড় হয়েছে। বাকিটা আসার পথে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নেওয়া হয়েছে তার বেশির ভাগই এস আলম গ্রুপের। এর বাইরে পাঁচ হাজার টন সিটি গ্রুপ, পাঁচ হাজার টন বিএসএম গ্রুপের। বাকিটা ছোট ছোট আমদানিকারকের।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতকাল মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক ও চীন থেকে ৩০০ টন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে। কিন্তু সবটাই হাতবদল হয়ে অন্য জেলায় চলে গেছে। টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা পেঁয়াজ চট্টগ্রামে থাকছে না। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এখন চট্টগ্রাম-টেকনাফমুখী।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সব সময়ই বলে আসছি যে আগে পেঁয়াজের আমদানি-সরবরাহ নিশ্চিত করুন। ভর্তুকি দিয়ে হলেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ দিন। এরপর নির্দিষ্ট লাভে বিক্রি করছে কি না প্রশাসন তদারকি করুক। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে এ ছাড়া কোনো পথ খোলা দেখছি না।সূত্র: কালের কন্ঠ