ফরিদপুরের আটরশিতে দুই পীরজাদার দ্বন্দ্ব: ১৪৪ ধারা জারি

ফরিদপুরের আটরশিতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীরের দুই ছেলের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

গত কয়েক বছর ধরে ক্ষমতা ও জায়গা জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলেও বর্তমানে তা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সংলগ্ন ফরিদপুর স্পিনিং মিলের অভ্যন্তরে এক ভাই পৃথক হেলিপ্যাড নির্মাণ করতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

আজ শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বজাকের মঞ্জিল সংলগ্ন একটি হেলিপ্যাড সেই এরশাদ সরকারের আমল থেকে রয়েছে। এরপর এক ভাই মাত্র কয়েক’শ গজ দূরে ফরিদপুর স্পিনিং মিলের অভ্যন্তরে আরও একটি হেলিপ্যাড তৈরির চেষ্টা করলে এক ভাইয়ের অনুসারীদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে বাধ্য হয়ে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

সূত্র জানায়, আটরশী হুজুরের বড় সন্তান মাহফুজুল হক মুজাদ্দেদীর আম মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) বলে জনৈক শহিদুল ইসলাম শাহিন বাদী হয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়াসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

ওই মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার পর থেকে ফরিদপুর স্পিনিং মিল এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

জানা গেছে, আটরশীর পীরের মেঝ সন্তান ও জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদীর অনুসারীরা গত সপ্তাহে ফরিদপুর স্পিনিং মিলে একটি হেলিপ্যাড তৈরি করতে যায়। এ সময় সেখানে আটরশী হুজুরের স্থলাভিষিক্ত মাহফুজুল হক মোজাদ্দেদীর অনুসারীরা বাধা দেন। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

হুজুরের দুই সন্তানের মধ্যে মাহফুজুল হকের (মিয়া ভাইজান) অনুসারীরা বর্তমানে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের কর্মী গ্রুপ আর মেঝ সন্তান এবং জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল তার অনুসারীরা জাকের পার্টির ব্যানারে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন।

কর্মী গ্রুপ ও জাকের পার্টি এখন একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আটরশীতে। গত কয়েকদিন যাবৎ এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে।

এরই মাঝে শুক্রবার মোস্তফা আমীর ফয়সলের আটরশীতে আসার কর্মসূচি জানানো হয়। আর মেঝ ভাইজানের এই সফরকে স্বাগত জানিয়ে কর্মী গ্রুপের পক্ষ হতে অভিনন্দনসূচক ব্যানার টাঙানো হয়। তবে তিনি যেন তার দলবল তথা বহর নিয়ে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে প্রবেশ না করেন সেজন্য তাকে অনুরোধ জানানো হয়।

ফরিদপুর স্পিনিং মিল গেট থেকে বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মোস্তফা আমীর ফয়সলের স্ত্রী শাহিনা ফয়সল প্রায় ২০টি মাইক্রোবাস নিয়ে ফরিদপুর স্পিনিং মিলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন।

জাকের পার্টির যুব ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, সিপিএইচডি নামে একটি আয়ুর্বেদিক কোম্পানি পরিদর্শন করতে মেঝ ভাইজানের আসার কথা। তবে তিনি এখনো আসেননি। তার পরিবর্তে মেঝ ভাবিজান আসবেন। তবে মেঝ ভাইজানের এখনো আসার কথা রয়েছে বলে মাহবুবুর রহমান জানান।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মিয়া ভাইজান হিসেবে পরিচিত মাহফুজুল হক ঢাকা থেকে সড়ক পথে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এসে পৌঁছান। প্রায় ৩০টি গাড়িরবহর ছিল তার সঙ্গে। তার অনুগামী কর্মী গ্রুপের প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ভক্ত তার স্বপক্ষে জাকের মঞ্জিলে অবস্থান করছেন।

শুক্রবার সকাল থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পশ্চিম দিকের মূল সড়কের আশপাশে কর্মী গ্রুপের লোকেরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে সেখানে প্রচুর সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। জাকের মঞ্জিলে প্রবেশকালে সন্দেহজনক কোনো গাড়ি কিংবা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সদরপুর থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, এটি আসলে জনতার জন্য প্রয়োগকৃত কোনো ১৪৪ ধারা নয়। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে সেখানে এই সিদ্ধান্ত জারি করা হয়েছে। উভয়পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী হালদার ১৪৪ ধারা জারির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেখানে উভয়পক্ষকেই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে।সূত্র : যুগান্তর অনলাইন