বিদায় মানে বেদনা। বেদনার সকরুণ চোখে চেয়ে থাকা আগামীর পানে। তেমনি আগামীর পানে চোখ রেখে বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বাংলা বর্ষ। এই আগামীর পানে চেয়ে থাকার মধ্যে আগমনী বার্তা থাকে, থাকে উৎসরেব হাতছানি। তবে এবারের আগমনী বার্তায় উৎসবের হাতছানি নেই। আছে বেদনার প্রতিচ্ছবি। করোনাভাইরাস যেন কেড়ে নিয়েছে উৎসবের সব রং।
আজ সোমবার, ১৩ এপ্রিল চৈত্র অবসানের দিন। দিনটিকে বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি। আবহমান বাংলার এক চিরায়ত উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি। কথিত আছে দিনটিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন।
আজ শেষ দিন ঋতুরাজ বসন্তেরও। বসন্তকে বিদায় জানিয়ে আসবে নতুন বছর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে/ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে/আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়।/সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়…।’
চৈত্রসংক্রান্তি বাংলার বিশেষ লোক উৎসব। প্রধানত সনাতনী সম্প্রদায়ের বিশেষ দিন হলেও চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক বাঙালির কাছে চৈত্রসংক্রান্তি এক বৃহত্তর লোক উৎসবে পরিণত হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে অত্যন্ত একটি পুণ্যদিন বলে মনে করে। চৈত্রসংক্রান্তির আরেকটি বড় উৎসব ‘চড়ক’। চৈত্রজুড়ে সন্নাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলেন।
তবে, এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পয়লা বৈশাখসহ সবধরনের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে এই ছুটি। এই অবস্থায় চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না এবার।
লৌকিকতা নয়, শুধু চিরায়ত বাঙালী চেতনায় উৎসরিত আবেগে, হৃদয় দিয়ে পালনের দিন আজ। আজকের প্রার্থণা হোক, কেটে যাক বিষাদের কালো অমানিশা। নতুন সূর্যোদয়ে হেসে উঠুক আলো ঝলমল পৃথিবী।
জেএম/রাতদিন