চাঁদে হাঁটার উপায় বের করল বাংলাদেশি তরুণরা

খুব কাছ থেকে কখনো চাঁদ দেখেছেন? উত্তর হয়তো হবে অবশ্যই না। কারণ পৃথিবী থেকে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজনই চাঁদকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন।

কিন্তু এবার গোটা বিশে^র মানুষকে কাছ থেকে চাঁদ দেখাবে বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল। শুধু কি তাই, সেখানে ঘুরতে পারবেন! হাঁটাহাঁটিও করতে পারবেন!

এমনটি জেনে নিশ্চই যে কারই প্রশ্ন আসবে বৈকি। আর প্রশ্ন আসাও খুব স্বাভাবিক। কারণ চাঁদে যাওয়া তো আর মুখের কথা নয়!

হ্যা তাহলে কাজের কথায় আসা যাক। কারণ এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বিশ্বের প্রায় দুই শতাধিক শহরে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

পরে যেখানে বিশ^ আসরে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দলটি। যে দলটির নাম হচ্ছে সাস্ট অলিক।

নাসার যে গবেষণাগুলো সাধারণ মানুষের আজ পর্যন্ত অজনা অদেখা, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি। যে অ্যাপসের নাম দেয়া হয়েছে লুনার ভিআর।

যার মাধ্যমে চাঁদে না গিয়েও চাঁদ দেখতে কেমন? সেটা ৩৬০ ডিগ্রী ভিউতে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ দেখতে কেমন লাগবে, সূর্যগ্রহণের অভিজ্ঞতা কেমন হবে সেটার একটি কল্পিত রূপ তুলে ধরা হয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনে।

এই অ্যাপটির মাধ্যমে নাসার অ্যাপোলো-১১ অভিযান, মহাকাশ যানটির অবতরণ এলাকা, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা এবং চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আবর্তন করা যাবে।

নাসায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বকারী এই দলটিতে ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে মোট পাঁচজন সদস্য রয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর...


দলটিকে মেন্টর হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।

ছাত্ররা হলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মাইনুল ইসলাম, আবু সাদিক মাহদি এবং সাব্বির হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম রাফি আদনান।

দলটির মেন্টর অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, “লুনার ভিআরের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারবে চাঁদের পৃষ্ঠটা দেখতে কেমন, সেখানে কী কী আছে, সেখানকার তাপমাত্রা কেমন, মহাকাশ যান অ্যাপোলো-১১ কোথায় অবতরণ করেছিল।”


মূলত চাঁদে ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবে লুনার ভিআর।

এতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়ে আরও জানার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন দলটির প্রধান অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী।

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে লুনার ভিআর নামের এই অ্যাপটি সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন।

এছাড়াও আই ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপলে শিগগিরই এই অ্যাপটি যুক্ত করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে নাসার আন্তর্জাতিক মূল প্রতিযোগিতায় মোট ৬ টি ক্যাটাগরির মধ্যে “বেস্ট ইউটিলাইজেশন অব ডেটা” অর্থাৎ নাসার কাছে যে তথ্য আছে তার সবচেয়ে ভাল প্রয়োগের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ ‘লুনার ভিআর’ প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন।

যেখানে ক্যালিফোর্নিয়া, কুয়ালালামপুর ও জাপান থেকে আসা দলগুলোকে পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ দল। আর বৈশ্বিক পর্যায়ের এমন আসরে এটাই প্রথম চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ।

সুত্র- বিবিসি বাংলা
এমআরডি/রাতদিন- ১৭.০২.২০১৯