ব্যাংকে টাকা আছে, লুটে খাওয়ার টাকা নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। ব্যাংকে টাকা আছে তবে লুটে খাওয়ার মতো টাকা নেই।

সোমবার, ১৭ জুন সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে সম্পূরক বাজেটের উপর সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন বলে বাসস পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বে অনেক দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে পারছি।। সরা বিশ্ব আজ অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিষ্ময়।

তিনি বলেন, প্রতি বাজেটেই সরকারের উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্খার প্রতিফলন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় ও ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। এই প্রাক্কলন সংঙ্গত কারণেই একটু বেশি করা হয়। রাজস্ব হার প্রাক্কলনে অনেকটা উচ্চাভিলাসী হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। এটা সমৃদ্ধি আগামীর পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্পূরক বাজেটের আলোচনায় অংশ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ব্যাংকে টাকা নেই। আমি বলছি টাকা থাকবে না কেন, টাকা আছে তবে লুটে খাওয়োর মতো টাকা নেই।’

গত এক দশকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। কোন মানুষের যদি উচ্চাভিলাস না থাকে, সে কিছু অর্জন করতে পারে না। বিগত বছরগুলোকে বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান এই কথাই প্রমান করে, আমাদের লক্ষ্যসমূহ সব সময়ই বাস্তবভিত্তিক ছিল। যা পরবর্তীতে বাজেট আলোচনায় বিস্তারিত বলার সুযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মূল বাজেটে রাজস্ব বাবদ প্রাক্কলিত ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা থেকে ২২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এরমধ্যে এনবিআর রাজস্ব বাবদ প্রাক্কলিত ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ননএনবিআর রাজস্ব বাবদ মূল বাজেটে প্রাক্কলিত ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটে ১২৭ কোটি টাকা হ্রাস করে ১ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব বাবদ মূল বাজেটে প্রাক্কলিত ৩৩ হাজার ২৫২ কোটি থেকে ৬ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা হ্রাস করে সংশোধিত বাজেটে ২৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে পরিচালন ব্যয়কে যৌক্তিকভাবে ন্যূনতম প্রবৃদ্ধি দিয়ে বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয় নিশ্চিত করার কারণে পরিচালন খাতে দক্ষতা অর্জন হয়েছে। তা মূলত উন্নয়ন বাজেটে অধিক হারে সম্পদ সঞ্চালনের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের যে অঙ্গীকার এবং কাঠামো রূপায়ন করে বৃহৎ প্রকল্পে বরাদ্দ নিশ্চিত করার উদ্যোগ বলে অনুমিত হয়।

বাজেট প্রাক্কলনের সময় মোট বাজেট ঘাটতি সবসময় জিডিপি ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার চেষ্টা করা হয়। অনেক দেশে বাজেট ঘাটতি এরচেয়ে অনেক বেশি ধরা হলেও ধারাবাহিকভাবে আমরা ৫ শতাংশে ধরে রাখছি। তবে বাজেট বাস্তবায়নে প্রকৃত আয় ও ব্যয় হ্রাস পাওয়ার ফলে ঘাটতি কিছুটা কম হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে প্রাক্কলিত ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা থেকে ৬৩৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত বাজেটে বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। জিডিপির ৫ দশমিক শূন্য শতাংশের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। এই ঘাটতি ব্যয় আমরা মেটাবো বৈদেশিক উৎস থেকে নীট অর্থায়ন বাবদ ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরিন উৎস থেকে নীট অর্থায়ন বাবদ ৭৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা সঞ্চালনের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে যেসকল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পায় সেসকল খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমান সম্বলিত একটি সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। আর্থিক বিবৃতিতে দায়যুক্ত ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় প্রদর্শন করা হয়। সম্পূরক বাজেটে ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বরাদ্দ ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে নীট ২২ হাজার ৩২ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দে দাঁড়িয়েছে মোট ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। ৩৭টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বিপরিতে সম্পূরক মঞ্জুরি বরাদ্দের দাবি ১৫ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, এরমধ্যে দায়যুক্ত ব্যয় ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ১৪ হাজার ৪৭ কোটি টাকা।

শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট যদি সঠিকই না হবে তাহলে মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এতো উন্নয়ন করলো কিভাবে। কেউ কেউ বলছেন বাজেট দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেননি। যদি বাস্তবায়ন করতেই না পারতাম তাহলে, ২০০৮ সালে আমরা ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেয়েছিলাম, এবার বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

এসকে/রাতদিন